অনিয়ম ও খেলাপি ঋণে সংকটে ব্যাংক খাত, কমছে মুনাফা ও সিএসআর ব্যয়

প্রতিবেদক: ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে অনিয়ম–দুর্নীতি এবং লুকানো খেলাপি ঋণের কারণে দেশের ব্যাংক খাত বড় ধরনের সংকটে পড়েছে। এর সঙ্গে নতুন করে যুক্ত হয়েছে আন্তর্জাতিক ঋণমান মেনে চলার চাপ। এসব কারণে খেলাপি ঋণ বাড়ছে, ব্যাংক ব্যবসায় ধাক্কা খাচ্ছে এবং নিট মুনাফা কমছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০২৪ সালে ব্যাংক খাতের সম্মিলিত নিট মুনাফা আগের বছরের তুলনায় প্রায় ২ হাজার ৭০০ কোটি টাকা বা ১৮ শতাংশ কমেছে।

নিট মুনাফা কমে যাওয়ায় ব্যাংকগুলোর করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) খাতেও ব্যয় অর্ধেকে নেমে এসেছে। চলতি ২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে (জানুয়ারি-জুন) ব্যাংকগুলোর সিএসআর ব্যয় হয়েছে ১৫১ কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ে ছিল ৩০৯ কোটি টাকা। ২০২৩ সালের প্রথম ছয় মাসে এ খাতে ব্যয় হয়েছিল ৫৭১ কোটি টাকা।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, যেসব ব্যাংক আগে সিএসআরে এগিয়ে ছিল, তাদের অনেকগুলোই লোকসানে পড়েছে বা মুনাফা কমে যাওয়ায় ব্যয় কমিয়েছে। ঋণের বিপরীতে নিরাপত্তা সঞ্চিতি ও কর পরিশোধের পর ১৫টির বেশি ব্যাংক নিট লোকসানে পড়েছে। এর মধ্যে রয়েছে সরকারি মালিকানার জনতা, অগ্রণী, বেসিক, বাংলাদেশ কৃষি (বিকেবি) ও রাজশাহী উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব)। বেসরকারি খাতের লোকসানী ব্যাংকের মধ্যে রয়েছে সোশ্যাল ইসলামী, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী, গ্লোবাল ইসলামী, ইউনিয়ন, বাংলাদেশ কমার্স, ন্যাশনাল, পদ্মা, আইএফআইসি, এবি, আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকসহ আরও কয়েকটি।

নিয়ম অনুযায়ী, কোনো ব্যাংক লোকসানে থাকলে সিএসআরে ব্যয় করতে পারবে না। আর যে ব্যাংক ব্যয় করবে, তাদের ব্যয়ের কাঠামো নির্ধারিত—শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে ৩০ শতাংশ করে মোট ৬০ শতাংশ, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন খাতে ২০ শতাংশ এবং আয়-উৎসারী কাজ, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, অবকাঠামো উন্নয়ন, ক্রীড়া ও সংস্কৃতিসহ অন্যান্য খাতে বাকি ২০ শতাংশ।

২০২৫ সালের প্রথম ছয় মাসে সর্বোচ্চ সিএসআর ব্যয় করেছে মার্কেন্টাইল ব্যাংক, যার পরিমাণ ২৪ কোটি টাকা। অন্যদের মধ্যে শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ব্যয় করেছে ১৪ কোটি, যমুনা ব্যাংক ১২ কোটি, প্রিমিয়ার ব্যাংক ১১ কোটি, পূবালী ব্যাংক ৯ কোটি ৮০ লাখ, এক্সিম ব্যাংক ৭ কোটি, ইসলামী ব্যাংক ৬ কোটি ৬৮ লাখ, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ৬ কোটি ৬৫ লাখ, আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক ৬ কোটি ৩০ লাখ এবং ঢাকা ব্যাংক ৬ কোটি ১৯ লাখ টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর সর্বোচ্চ মুনাফা করেছে বহুজাতিক স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক—৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এরপর অবস্থানে রয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক ১ হাজার ২১৪ কোটি, সিটি ব্যাংক ১ হাজার ৮৫ কোটি, এইচএসবিসি ১ হাজার ৭৯ কোটি, সোনালী ব্যাংক ৮৬৬ কোটি, পূবালী ব্যাংক ৭৬২ কোটি, ইস্টার্ন ব্যাংক ৭৫০ কোটি, প্রাইম ব্যাংক ৭৪৫ কোটি, কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলন ৬০০ কোটি, উত্তরা ব্যাংক ৪৮৮ কোটি, ডাচ্-বাংলা ব্যাংক ৪৭৩ কোটি এবং ট্রাস্ট ব্যাংক ৩৭৩ কোটি টাকা নিট মুনাফা করে।