
প্রতিবেদক: দেশের আর্থিক সীমাবদ্ধতা ও সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের লক্ষ্যে নতুন উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণে এবার কঠোর হচ্ছে সরকার। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) প্রণয়নে এমন কোনো প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হবে না, যার প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট নয়। পরিকল্পনা কমিশন জানিয়েছে, জাতীয় স্বার্থ, সময়োপযোগিতা ও প্রকল্পের গুরুত্ব বিবেচনায় রেখে যাচাই-বাছাই করেই অন্তর্ভুক্তির সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে।
এই লক্ষ্যে মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে পাঁচ দিনের সিরিজ বৈঠক শুরু হয়েছে। প্রতিটি বৈঠকে প্রস্তাবিত প্রকল্পগুলোর যৌক্তিকতা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকগুলোতে সভাপতিত্ব করছেন পরিকল্পনা সচিব ইকবাল আব্দুল্লাহ হারুন। প্রথম দিনে কৃষি মন্ত্রণালয়সহ ১১টি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এবং দ্বিতীয় দিনে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়সহ আরও ১১টি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠক হয়। ২৭ এপ্রিল সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ, ২৮ এপ্রিল স্বাস্থ্যসেবা বিভাগসহ ২০টি মন্ত্রণালয় এবং ২৯ এপ্রিল গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়সহ ১০টি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বৈঠকের পরিকল্পনা রয়েছে।
পরিকল্পনা কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরে প্রায় ২,৫০০টিরও বেশি প্রকল্প প্রস্তাব পেশ করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৯২১টি প্রকল্প অনুমোদন না দিয়ে তালিকাভুক্ত করা হয়। তবে এবার নতুন প্রকল্পের সংখ্যা প্রায় দেড় হাজারে সীমিত রাখা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, শেষ পর্যন্ত ৫৫০ থেকে ৬০০টি প্রকল্প চূড়ান্তভাবে এডিপিতে স্থান পাবে।
সূত্র জানায়, অতীতে রাজনৈতিক চাপে অনেক অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প অন্তর্ভুক্ত করা হতো। বিশেষ করে পূর্ববর্তী আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে প্রায় ৩০০ সংসদ সদস্যের চাহিদা পূরণে প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল, যার অধিকাংশ প্রকল্প কাঙ্ক্ষিত সুফল দিতে পারেনি। এবারের অন্তর্বর্তী সরকার তাই প্রকল্প গ্রহণে কড়াকড়ি নীতি গ্রহণ করেছে। শুধু প্রয়োজনীয় প্রকল্পই বিবেচনায় নেওয়া হচ্ছে। এমনকি যেসব প্রকল্পের বাস্তবায়ন ধীরগতি বা অনিশ্চিত, সেগুলোকেও বাদ দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে, নতুন ও চলমান প্রকল্পে অর্থ বরাদ্দের ক্ষেত্রে পরিকল্পনা কমিশন সাত দফা নির্দেশনা দিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে: আগামী অর্থবছরে সমাপ্তির সম্ভাবনা থাকা প্রকল্পগুলোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া, চলতি অর্থবছরে সমাপ্ত প্রকল্পকে আবার নতুনভাবে অন্তর্ভুক্ত না করা, চলমান প্রকল্পে বরাদ্দ নিশ্চিত করে পরে নতুন প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া, সেক্টরভিত্তিক মোট বরাদ্দের ৫ শতাংশ থোক বরাদ্দ রাখা, বৈদেশিক সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পে ম্যাচিং ফান্ড নিশ্চিত করা, অনুমোদিত প্রকল্প দলিল অনুসারে নগদ বৈদেশিক মুদ্রার ব্যয় নির্ধারণ এবং সংস্থার নিজস্ব অর্থায়ন স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা।
আইএমইডির সাবেক সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন বলেন, অতীতে অনেক উচ্চাভিলাষী ও লোক দেখানো প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছিল, যার ফলে বিনিয়োগের পরও কাঙ্ক্ষিত আর্থিক ও সামাজিক সুবিধা পাওয়া যায়নি। তিনি মনে করেন, সরকার যদি প্রকল্প গ্রহণে লাগাম টানতে পারে, তাহলে তা দেশের অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক হবে। জনগণের উপকারে আসে এমন প্রকল্পেই গুরুত্ব দেওয়া উচিত, অপ্রয়োজনীয় প্রকল্পে বিনিয়োগ দেশের সম্পদের অপচয় ছাড়া কিছু নয়।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার প্রকল্প গ্রহণে যদি এই কঠোরতা কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করতে পারে, তবে অপচয় কমবে, অর্থনৈতিক শৃঙ্খলা ফিরবে এবং দেশের সীমিত সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।