অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় শাশা ডেনিমসের বিনিয়োগ পরিকল্পনা

অনলাইন ডেক্স: জাতীয় রপ্তানি ট্রফি পাওয়া শাশা ডেনিমস নতুন কারখানা স্থাপন ও ব্যবসা সম্প্রসারণের জন্য ২০২৪ সালের শুরুতে ৬০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের পরিকল্পনা করেছিল। তবে বর্তমান অর্থনৈতিক বাস্তবতায় পরিকল্পনা থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।

শাশা ডেনিমসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শামস মাহমুদ জানিয়েছেন, “ঋণ নিয়ে তারপর উচ্চ হারে সুদ দিয়ে ব্যবসা পরিচালনা সম্ভব নয়।”

শাশা ডেনিমস ঢাকা রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (DEPZ) ২১০টি নতুন লুমের একটি কারখানা স্থাপনের পরিকল্পনা করেছিল, যা প্রায় ১.২৫ কোটি ডলার (প্রায় ১৩৭ কোটি টাকা) আয় বাড়াতে পারত। এছাড়া, তারা আরেকটি পোশাক কারখানায় বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল।

এ পরিকল্পনার মাধ্যমে—

  • ৪০০ কোটি টাকার টার্নওভার বাড়ানোর লক্ষ্য ছিল
  • প্রায় ২ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হওয়ার আশা ছিল

কিন্তু ১৪% ছাড়িয়ে যাওয়া সুদহার বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলে বিনিয়োগ পরিকল্পনা কাটছাঁট করে এখন শুধু ১৬০ কোটি টাকা বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নিয়েছে শাশা ডেনিমস।

শামস মাহমুদ বলেন, “যেটা না করলেই নয়, কেবল সেই বিনিয়োগটাই করছি।”

শাশা ডেনিমসের সিদ্ধান্ত দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক বাস্তবতার প্রতিফলন।

  • ২০২৩-২৪ অর্থবছরের বাজেট ঘোষণার সময় অর্থনীতি ভালো অবস্থায় ছিল না।
  • এরপর রাজনৈতিক অস্থিরতা, আইন-শৃঙ্খলার অবনতি, বিনিয়োগের অনিশ্চয়তা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করেছে।
  • রপ্তানি খাত বাদে প্রায় সব অর্থনৈতিক সূচক নেতিবাচক প্রবৃদ্ধির মুখে পড়েছে।

এ কে খান অ্যান্ড কোম্পানি লিমিটেডের ভাইস-চেয়ারম্যান আবুল কাসেম খান বলেন,
“ব্যবসা নির্ভর করে পূর্বানুমানযোগ্যতার (predictability) ওপর। এখন ব্যবসায়ীরা চরম অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন।”

তিনি আরও বলেন—নির্বাচন কবে হবে, রোডম্যাপ কী— এসব প্রশ্নের উত্তর নেই।নতুন সরকার এলে নীতি পরিবর্তন হবে কি না, তা নিয়েও শঙ্কা রয়েছে।আইনশৃঙ্খলার উন্নতি না হলে বিনিয়োগ বাড়বে না।

ব্যবসায়ীদের প্রধান চ্যালেঞ্জগুলো হলো—নীতি ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা,গ্যাস সংকট,উচ্চ সুদের হার,ব্যাংকের তারল্য সংকট ,কর জটিলতা ও হয়রানি।

টিএডি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আশিকুর রহমান তুহিন বলেন,
দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে বিনিয়োগ নিয়ে সবাই আরও সতর্ক হয়ে গেছে।

তিনি আরও উল্লেখ করেন—

  • রপ্তানি খাতের ইমেজ সংকট কাটিয়ে ওঠা গেলেও অর্থনীতি ও জ্বালানি খাতে সমস্যা রয়ে গেছে।
  • গ্যাস সংকট ও ব্যাংকের তারল্য সংকটের কারণে অনেক কারখানা ব্যাক-টু-ব্যাক এলসি খুলতে পারছে না।
  • নতুন বিনিয়োগ কমে গেছে, ব্যবসায়ীরা লাইন সম্প্রসারণেও সতর্কতা অবলম্বন করছেন।

অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে ব্যবসায়ীরা ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। শাশা ডেনিমসের মতো শতভাগ রপ্তানিমুখী কোম্পানির বিনিয়োগ পরিকল্পনা সংকুচিত হওয়া দেশের অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য নেতিবাচক ইঙ্গিত বহন করছে। এখন প্রয়োজন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন, নীতি নির্ধারণে স্বচ্ছতা, গ্যাস সংকট নিরসন এবং ব্যাংকিং খাতের স্থিতিশীলতা— যা অর্থনীতিকে পুনরুজ্জীবিত করতে পারে।