
প্রতিবেদক: সরকারি ব্যয় হ্রাস এবং সার্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে দেশের নির্মাণ খাতে চাহিদা ব্যাপকভাবে কমে গেছে। ফলে তিন বছরেরও বেশি সময় পর প্রথমবারের মতো রডের দাম টনপ্রতি ৯০ হাজার টাকার নিচে নেমে এসেছে। বাংলাদেশ ট্রেডিং করপোরেশনের (টিসিবি) তথ্য অনুযায়ী, ৬০-গ্রেড এমএস রডের খুচরা দাম বর্তমানে ৮৫ থেকে ৮৯ হাজার টাকার মধ্যে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় ১২ শতাংশ কম। ২০২২ সালের মার্চেও রডের দাম ছিল এর চেয়ে বেশি।
বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএসএমএ) জানিয়েছে, দেশে আগে প্রতি মাসে সাড়ে ছয় লাখ টনের মতো রড ব্যবহৃত হলেও এখন তা নেমে এসেছে প্রায় ৪ লাখ টনে, অর্থাৎ চাহিদা কমেছে প্রায় ৩৫ শতাংশ। এর একটি বড় কারণ সরকারি অবকাঠামো প্রকল্পগুলোর ধীরগতি ও বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) সর্বনিম্ন বাস্তবায়ন।
বিএসএমএর মহাসচিব সুমন চৌধুরী বলেন, ‘বাজার এতটাই অস্থির যে, মাত্র কয়েক মিনিটের ব্যবধানে রডের দাম নয় শতাংশ কমে গেছে।’ তিনি জানান, অভ্যন্তরীণ চাহিদা প্রায় নেই বললেই চলে, যার ফলে অনেক ছোট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান উৎপাদন স্থগিত রেখেছে। বর্ষায় পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়েছে, অনেক নির্মাণ প্রকল্প পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় কাজ বন্ধ হয়ে গেছে।
বিএসআরএম-এর উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন সেনগুপ্ত বলেন, দাম ও চাহিদার এই পতন পুরোপুরি বাজার অর্থনীতির ওপর নির্ভরশীল। চাহিদা না থাকায় অনেক কোম্পানি কেবল টিকে থাকার জন্য নামমাত্র মুনাফায় রড বিক্রি করছে। পরিস্থিতির উন্নয়ন সম্পূর্ণভাবে সরকারি প্রকল্পে বিনিয়োগ ও কার্যক্রম পুনরায় শুরু হওয়ায় নির্ভর করছে বলে তিনি মনে করেন।
জিপিএইচ ইস্পাতের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বলেন, নগরাঞ্চলে নির্মাণকাজ ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কমে গেছে, বড় প্রকল্পগুলোতে এই হার ৬০ শতাংশ পর্যন্ত। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগকারীরা অপেক্ষমাণ।
তিনি আরও বলেন, গ্রামীণ অর্থনীতি তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল থাকলেও চলমান বর্ষায় ভারী বৃষ্টিপাত উৎপাদন ব্যাহত করছে, যার প্রভাবে সরবরাহ ও উৎপাদন চেইন আরও চাপে পড়েছে।