
অনলাইন ডেক্স: দেশের চলমান অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যেও ২০২৪ সালে ভারী ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানের বিক্রি বেড়েছে। গাড়ি বিক্রেতা ও যানবাহন নিবন্ধনের তথ্য অনুযায়ী, করোনা মহামারির পর বাণিজ্যিক যানবাহনের চাহিদা বাড়ায় বিক্রি বৃদ্ধি পেয়েছে।
বাণিজ্যিক পরিবহন খাতের সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, অর্থনৈতিক সংকটের কারণে ব্যবসায়ীরা নতুন বিনিয়োগের পরিবর্তে পুরোনো যানবাহন প্রতিস্থাপন করছেন। ফলে নতুন ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানের বিক্রি বেড়েছে। যদিও সামগ্রিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে এর সরাসরি সম্পর্ক নেই, তবে লজিস্টিকস, ই-কমার্স ও পণ্য পরিবহনের চাহিদা থাকায় বাজারে বাণিজ্যিক যানবাহনের চাহিদা অব্যাহত রয়েছে।
দেশের ভারী ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যান বাজারে ভারতীয় ব্র্যান্ড অশোক লেল্যান্ড, টাটা ও আইশার, জাপানি ব্র্যান্ড হিনো এবং চীনা ব্র্যান্ড ফোটন প্রাধান্য বিস্তার করছে।
- আইশার ট্রাকের পরিবেশক রানার গ্রুপের চেয়ারম্যান হাফিজুর রহমান খান জানান, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ও ডলার সংকটের কারণে আমদানি ব্যয় বেড়ে যায়। ফলে সরকার এলসি খোলার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করে, যা যানবাহন বিক্রয়ে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। তবে ২০২৩ সালের শেষ দিকে এলসি বিধিনিষেধ শিথিল হওয়ায় বিক্রি আবার বাড়তে শুরু করে।
- অশোক লেল্যান্ডের পরিবেশক ইফাদ গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান তাসকিন আহমেদ বলেন, পরিবহন ব্যবসায়ীরা পুরোনো যানবাহন প্রতিস্থাপন করায় বিক্রি বেড়েছে।
- ফোটনের পরিবেশক এসিআই মোটরসের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর সুব্রত রঞ্জন দাস জানান, ২০২৪ সালে ফোটন গাড়ির বিক্রি ৮২ শতাংশ বেড়েছে। চীনা যানবাহন সম্পর্কে ভুল ধারণা দূর হওয়া এবং জ্বালানি সাশ্রয়ী হওয়ায় চাহিদা বাড়ছে।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) এর তথ্য অনুযায়ী,
- ২০২৩ সালে ১,৮৭৪টি নতুন কাভার্ড ভ্যান নিবন্ধিত হয়, ২০২৪ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২,৯৪৯টি—প্রবৃদ্ধি ৫৭%।
- ২০২৩ সালে ২,২৯২টি ট্রাক নিবন্ধন হয়েছিল, যা ২০২৪ সালে বেড়ে ২,৬৭১টি হয়েছে—প্রবৃদ্ধি ১৬.৫%।
তবে সুব্রত রঞ্জন দাস মনে করেন, নিবন্ধন সংখ্যা প্রকৃত বিক্রির চিত্র পুরোপুরি তুলে ধরে না, কারণ অনেক ক্রেতা গাড়ি কেনার পরও দীর্ঘ সময় পরে নিবন্ধন করেন।
বাংলাদেশ বাস ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শুভঙ্কর ঘোষ জানান, সড়কে নতুন ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানের সংখ্যা বেড়েছে, তবে পরিবহন ব্যবসা প্রায় ৪০% কমেছে। এর মানে, নতুন যানবাহনের বিক্রি বৃদ্ধি পেলেও সামগ্রিক পরিবহন খাতের আয় কমেছে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ভবিষ্যতেও ট্রাক ও কাভার্ড ভ্যানের বাজার ভালো থাকবে। তবে অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, আমদানি নীতিমালা ও ব্যবসায়িক পরিবেশের ওপর এই প্রবণতা নির্ভর করবে।