অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা, দেশের সম্পদ পুনরুদ্ধারে আন্তর্জাতিক সহায়তা

অনলাইন ডেক্স: বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংক থেকে পাচার হওয়া ২০০ কোটি টাকা বা এর বেশি পরিমাণ অর্থ উদ্ধারের জন্য আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ করবে। গত ৩০ জানুয়ারি বিএফআইইউ এবং ১৯টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের (এমডি) বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বৈঠকের নথিতে জানা যায়, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো প্রথমে পাচার হওয়া ২০০ কোটি টাকা বা তার বেশি পরিমাণ অর্থ উদ্ধারে পর্যবেক্ষণ করবে এবং এরপর মামলা করার প্রস্তুতি নিবে। এসব প্রতিষ্ঠান উদ্ধার হওয়া টাকার একটি অংশ পাবে। এই প্রক্রিয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংক বা অন্য কোনো ব্যাংক থেকে টাকা দেওয়ার প্রয়োজন হবে না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে সোনালী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, বেসিক ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ইউনিয়ন ব্যাংক এবং ঢাকা ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী বা ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা উপস্থিত ছিলেন। বিএফআইইউ পর্যায়ক্রমে অন্যান্য ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করবে।

৪ ফেব্রুয়ারি বিএফআইইউ ওই ১৯টি ব্যাংককে ২০০ কোটি বা তার বেশি টাকা পাচারের সন্দেহজনক কেসের তালিকা চেয়েছে এবং নতুন কোনো ঘটনা ঘটলে তাৎক্ষণিকভাবে বিএফআইইউকে জানাতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

বৈঠকের কার্যবিবরণীতে বলা হয়েছে, যেহেতু আইনি প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় মামলা হবে, ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় নথি ও প্রমাণ সমন্বয় করে তথ্য প্রদান করতে হবে। সব তথ্য যাচাই করার পর আইনি প্রতিষ্ঠানগুলো মামলা করবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর জানান, ব্যাংকগুলোকে কাগজপত্র সংগ্রহ ও সংরক্ষণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এবং দেশে আত্মসাৎ করা টাকা উদ্ধারে ব্যাংকগুলো তাদের নিজস্ব আইনি প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে পারে। তবে, ১০ শীর্ষ শিল্পগ্রুপ এবং শেখ হাসিনার পরিবারের সদস্যরা এই উদ্যোগের বাইরে থাকবেন, কারণ তাদের বিষয়ে আগে থেকেই আলাদা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

১০টি শিল্পগ্রুপ, যেমন এস আলম, বেক্সিমকো, সামিট, বসুন্ধরা, জেমকন, ওরিয়ন গ্রুপ, নাবিল গ্রুপ, নাসা গ্রুপ, সিকদার গ্রুপ এবং সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরীর পরিবারের মালিকানাধীন আরামিট গ্রুপের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে।

এই ১১ অগ্রাধিকারভিত্তিক মামলায় আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো সহায়তা করছে, যেমন যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্টি-করাপশন কো-অর্ডিনেশন সেন্টার, স্টোলেন অ্যাসেট রিকভারি ইনিশিয়েটিভ (এসটিএআর), যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিস এবং ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর অ্যাসেট রিকভারি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, “পাচার হওয়া টাকা উদ্ধারের আইনি প্রক্রিয়ায় তিন থেকে চার বছর সময় লাগতে পারে।” তিনি আরও বলেন, “স্বল্পমেয়াদী লক্ষ্য হচ্ছে এক বছরের মধ্যে বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদ চিহ্নিত করে বাজেয়াপ্ত করা। সম্পদ পুনরুদ্ধারের জন্য বড় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।”

শ্বেতপত্রে ধারণা করা হয়েছে, গত ১৫ বছরে প্রতি বছর গড়ে ১৬ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে।