আইএফআইসি ব্যাংকের বিশাল সঞ্চিতি ঘাটতি, লোকসানে বিনিয়োগকারীদের শূন্য লভ্যাংশ

প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আইএফআইসি ব্যাংক পিএলসির সঞ্চিতি ঘাটতির পরিমাণ উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে গেছে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে যেখানে ঘাটতির পরিমাণ ছিল মাত্র ১৬০ কোটি টাকা, ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকায়। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) প্রকাশিত ২০২৪ হিসাব বছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনের নিরীক্ষকের মতামতে বিষয়টি উঠে এসেছে।

নিরীক্ষকের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকটির মোট খেলাপি ঋণ দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা, যার মধ্যে মন্দ ঋণ রয়েছে ১৯ হাজার ৫৩৪ কোটি টাকা। এ অবস্থায় নিয়ম অনুযায়ী ব্যাংকটির ১৯ হাজার ৯০০ কোটি টাকার সঞ্চিতি সংরক্ষণের প্রয়োজন ছিল, কিন্তু ব্যাংকটি সংরক্ষণ করেছে মাত্র ১ হাজার ৩৪৩ কোটি টাকা। এতে করে সঞ্চিতি ঘাটতি দাঁড়ায় ১৮ হাজার ৫৫৭ কোটি টাকা। এ ঘাটতি পূরণ ছাড়াই বাংলাদেশ ব্যাংক ব্যাংকটিকে আর্থিক প্রতিবেদন চূড়ান্ত করার অনুমোদন দিয়েছে বলে নিরীক্ষকের মন্তব্যে উল্লেখ রয়েছে।

চলতি ২০২৫ হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকের (জানুয়ারি-মার্চ) অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ব্যাংকটির সঞ্চিতি ঘাটতির পরিমাণ আরও বেড়ে ২০ হাজার ৮০৩ কোটি টাকায় দাঁড়িয়েছে। এ সময় ব্যাংকটি কর-পরবর্তী নিট লোকসান করেছে ১২১ কোটি টাকা, যেখানে আগের বছর ব্যাংকটি ৩০০ কোটি টাকার মুনাফা করেছিল। ফলে ২০২৪ হিসাব বছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি আইএফআইসি ব্যাংক।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৬৩ পয়সা, যেখানে ২০২৩ সালে শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ছিল ১ টাকা ৫৬ পয়সা। ২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ২ টাকা ৬০ পয়সা, যেখানে আগের বছরের একই সময়ে (পুনর্মূল্যায়িত) ইপিএস ছিল ২১ পয়সা।

আইএফআইসি ব্যাংক ১৯৮৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। এর অনুমোদিত মূলধন ৪ হাজার কোটি এবং পরিশোধিত মূলধন ১ হাজার ৯২২ কোটি টাকা। রিজার্ভে আছে ১ হাজার ৬৯০ কোটি টাকা। মোট শেয়ারের সংখ্যা ১৯২ কোটি ২০ লাখের বেশি। এর মধ্যে সরকারের হাতে রয়েছে ৩২.৭৫ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর কাছে ২১.৩৫ শতাংশ, বিদেশিদের কাছে ০.৬৩ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ৪৫.২৭ শতাংশ শেয়ার।

২০২৫ সালের প্রথম প্রান্তিকে ব্যাংকটির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (NAVPS) ছিল ১৫ টাকা ৬৩ পয়সা। গত বৃহস্পতিবার ডিএসইতে ব্যাংকটির শেয়ার লেনদেন হয়েছে ৫ টাকা ৬০ পয়সায়। গত এক বছরে এর শেয়ারদর ওঠানামা করেছে ৫ টাকা ৪০ পয়সা থেকে ১১ টাকা ৮০ পয়সার মধ্যে।

আইএফআইসি ব্যাংকের এই বিপুল সঞ্চিতি ঘাটতি ও ধারাবাহিক লোকসান বিনিয়োগকারীদের জন্য বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর্থিক ব্যবস্থাপনায় ঘাটতি ও খেলাপি ঋণের লাগাম টানতে না পারলে ব্যাংকটির অবস্থান আরও দুর্বল হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।