
প্রতিবেদক: ঢাকায় আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সফররত মিশনের বৈঠকে ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ের বিষয়টি সমঝোতার মাধ্যমে শেষ হয়নি। রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধি এবং টাকা-ডলার বিনিময় হার নিয়ে দু’পক্ষ ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি। আগামী সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে আইএমএফের বসন্তকালীন বৈঠকে উচ্চ পর্যায়ে এ বিষয়ে আলোচনা হবে। যদি ঐকমত্য অর্জিত হয়, তবে জুনে আইএমএফের পরিচালনা পর্ষদে ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি অনুমোদনের জন্য উঠতে পারে।
আইএমএফ মিশন প্রধান ক্রিস পাপাজর্জিও সাংবাদিকদের বলেন, ঋণ কর্মসূচির বিষয়ে তাদের আলোচনা এখনও শেষ হয়নি, এটি চলমান রয়েছে। বাংলাদেশের জন্য আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির শর্ত পর্যালোচনার জন্য ইতোমধ্যে তিনটি সফর করা হয়েছিল, তবে এবারই প্রথম সব বিষয়ে একমত হতে পারেনি দুই পক্ষ। বিশেষভাবে, আইএমএফ বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পক্ষে থাকলেও, বাংলাদেশ ব্যাংক আরও সময় নিতে চাচ্ছে। এ কারণে ওয়াশিংটনে বৈঠকে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরবে বাংলাদেশ।
আইএমএফের ৪৭০ কোটি ডলার ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি ছাড়ের আগে শর্ত পর্যালোচনার জন্য ক্রিস পাপাজর্জিওর নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের একটি মিশন ২ এপ্রিল ঢাকায় আসে। তারা দুই সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এবং সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে বৈঠক করেছে।
বর্তমানে আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির অধীনে বাংলাদেশ তিনটি কিস্তিতে মোট ২৩১ কোটি ডলার পেয়ে এসেছে। চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তিতে ১১৪ কোটি থেকে ১৩০ কোটি ডলার ছাড় নিয়ে আলোচনা চলছে। গত ডিসেম্বরে চতুর্থ কিস্তির শর্ত পর্যালোচনা শেষে কর্মকর্তাদের মধ্যে ঐকমত্য হলেও, তা ছাড়া যেতে পারেনি।
আইএমএফ মিশন, চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধে বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৩.৩ শতাংশে নেমে আসার পর, মূল্যস্ফীতি ১১.৭০ শতাংশ থেকে কমে ৯.৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। যদিও এটি বাংলাদেশ ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় এখনও বেশি, তবে ইতিবাচক হিসেবে দেখা হচ্ছে। মিশন, বাংলাদেশকে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতি বজায় রাখতে, বিনিময় হার নমনীয় করার জন্য এবং রিজার্ভ বাড়ানোর ওপর জোর দিয়েছে।
এছাড়া, আইএমএফ বাংলাদেশের কর-জিডিপি অনুপাত বাড়ানোর এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে করছাড় কমানোর সুপারিশ করেছে। সুশাসন এবং তদারকি ব্যবস্থার উন্নতির জন্যও নির্দিষ্ট পদক্ষেপের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। মিশন মনে করে, বিদেশি বিনিয়োগ এবং রপ্তানি বাড়ানোর জন্য আর্থিক খাতের সংস্কার অপরিহার্য।
আইএমএফের সুপারিশে বলা হয়েছে, সরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের নিচে এবং বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ৫ শতাংশের নিচে নামিয়ে আনা হবে। সরকার পতনের পর লুকানো খেলাপি ঋণের আসল চিত্র প্রকাশ করার পর, গত ডিসেম্বরে খেলাপি ঋণ বেড়ে ৩ লাখ ৪৫ হাজার ৭৬৫ কোটি টাকায় পৌঁছেছে, যা মোট ঋণের ২০.২০ শতাংশ। এর মধ্যে বেসরকারি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ ১৫.৬০ শতাংশ এবং রাষ্ট্রীয় বাণিজ্যিক ব্যাংকে ৪২.৮৩ শতাংশ।
আইএমএফের চলমান ঋণ কর্মসূচি ২০২৬ সাল পর্যন্ত চলবে এবং এই সময়ের মধ্যে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জন এবং ব্যাংকিং খাতে সংস্কার করতে হবে।