
প্রতিবেদক: আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে ঋণ না নেওয়া বাংলাদেশের জন্য সংকট তৈরি করতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
তিনি বলেন, আইএমএফের ঋণ কর্মসূচি থেকে বেরিয়ে গেলে অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী সংস্থাও অর্থায়ন সংক্রান্ত প্রশ্ন তুলতে পারে। বিশেষ করে বিশ্বব্যাংক, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) এবং জাইকা-এর মতো সংস্থাগুলো বাংলাদেশের প্রতি আস্থা হারাতে পারে।
গতকাল মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয়ে ইকোনমিক রিপোর্টার্স ফোরাম (ইআরএফ)-এর সদস্যদের সঙ্গে এক প্রাক-বাজেট আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন। তিনি আরও জানান, জুনে আইএমএফ দুটি কিস্তির অর্থ একসঙ্গে ছাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশের মোট দেশজ উৎপাদন (ডিজিপি) এবং ঋণের অনুপাত অন্যান্য দেশের তুলনায় অনেক কম, তবে সরকারের ব্যয়ের চাহিদা পূরণের জন্য রাজস্ব কম হওয়ায় ঋণ নিতে হয়। তিনি বলেন, “আইএমএফ ঋণ দিচ্ছে বাজেট সহায়তা হিসেবে, তবে আমরা ঋণের প্রতি বেশি নির্ভরশীল নই।
তিনি জানান, চতুর্থ কিস্তি পেছানোর কারণে কিছু শর্তের মধ্যে বাংলাদেশের পক্ষে পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
আইএমএফের অন্যতম শর্ত ছিল মুদ্রা বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া। এ বিষয়ে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, এখনই বলা সম্ভব নয়, কারণ মূল্যস্ফীতি কতোদিন থাকবে তা দেখতে হবে। যদি হঠাৎ করে বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতি হতে পারে, যা বিপদ বাড়াতে পারে।”
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আসন্ন বাজেটের বড় চ্যালেঞ্জ হলো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ এবং কর্মসংস্থান বৃদ্ধি। এ জন্য কৃষি ও বিদ্যুৎ খাতে ভর্তুকি অব্যাহত রাখা হবে এবং শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হবে। তিনি আরও জানান, মেগা প্রকল্প গ্রহণের পরিবর্তে এমন প্রকল্প নেওয়া হবে যা স্থানীয় কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেছেন, ভ্যাট কমানোর বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে ভাবা হচ্ছে। তিনি জানান, ভ্যাটের একক হার বাস্তবায়ন হলে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ তৈরি হবে। একই সাথে, কর্মকর্তা আয়সীমা বাড়ানোর প্রস্তাবও উঠেছে, যেখানে ৩.৫ লাখ টাকা থেকে ৪ লাখ করার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এছাড়া, ইআরএফ সভাপতি দৌলত আকতার মালা ২৭টি লিখিত প্রস্তাব তুলে ধরেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল ব্যাংক হিসাবের ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত জমার ওপর আবগারি শুল্ক প্রত্যাহার এবং কর্মকর্তা আয়সীমা বৃদ্ধি। সভায় ইআরএফ সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমসহ অন্যান্য সদস্যরা বক্তব্য দেন।
এভাবে, আসন্ন বাজেট ও আইএমএফ ঋণের বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা ও পরিকল্পনা চলছে, যেখানে সরকারের পদক্ষেপের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করছে।