আইটি দুনিয়ায় ছাঁটাইয়ের ঢেউ: বিপাকে লাখো কর্মী

প্রতিবেদক: বিশ্বের বড় বড় প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোতে কর্মী ছাঁটাইয়ের ধারা অব্যাহত রয়েছে। এতে করে কর্মসংস্থানের নিরাপত্তা নিয়ে তৈরি হয়েছে তীব্র অনিশ্চয়তা ও উদ্বেগ। গুগল, মাইক্রোসফট, অ্যামাজন ও ক্রাউডস্ট্রাইকের মতো বহুজাতিক করপোরেশনগুলোতে হাজার হাজার কর্মী চাকরি হারাচ্ছেন, যার প্রভাব পড়ছে বিশ্বব্যাপী তথ্যপ্রযুক্তি পেশাজীবীদের ওপর।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক স্টার্টআপ পর্যবেক্ষণ সংস্থা ‘লে অফস এফওয়াইআই’-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের শুরু থেকে মে মাস পর্যন্ত বিশ্বের ১৩০টি কোম্পানিতে ৬১ হাজারের বেশি কর্মী ছাঁটাই হয়েছেন।

মাত্র কয়েক সপ্তাহ আগে, ১৩ মে, মাইক্রোসফট ঘোষণা দেয় তারা ছয় হাজার কর্মী ছাঁটাই করছে। এটি প্রতিষ্ঠানটির ইতিহাসে ২০২৩ সালের পর সবচেয়ে বড় গণছাঁটাই। এই ছাঁটাইয়ের ফলে শুধু যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন স্টেটেই একদিনে দুই হাজারের বেশি মানুষ চাকরি হারিয়েছেন।

গুগলও ধারাবাহিকভাবে কর্মী ছাঁটাই করছে। চলতি বছরের মে মাসের শুরুতে তারা বিজ্ঞাপন ও বিপণন বিভাগের ২০০ কর্মীকে ছাঁটাই করে। এর আগে পিক্সেল, অ্যান্ড্রয়েড ও ক্রোম ক্লাউড বিভাগ থেকেও কর্মী ছাঁটাই করা হয়েছিল। উল্লেখযোগ্যভাবে, ২০২৩ সালে গুগল একসঙ্গে ১২ হাজার কর্মীকে ছাঁটাই করেছিল।

দীর্ঘদিন পর অ্যামাজন আবার ছাঁটাই শুরু করেছে। প্রতিষ্ঠানটি ডিভাইস ও পরিষেবা বিভাগে ১০০টি পদ বাতিল করেছে। এর মধ্যে রয়েছে অ্যালেক্সা, কিন্ডল ও জুক্স-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। অন্যদিকে, সাইবার নিরাপত্তা কোম্পানি ক্রাউডস্ট্রাইক মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে তাদের ৫ শতাংশ কর্মী ছাঁটাইয়ের ঘোষণা দেয়। প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, দীর্ঘমেয়াদি মুনাফা বাড়ানোর লক্ষ্যেই এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, প্রযুক্তি খাতে চলমান এই ছাঁটাইয়ের পেছনে রয়েছে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। প্রথমত, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা। ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা, উচ্চ সুদের হার এবং মূল্যস্ফীতির চাপ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোকে খরচ কমাতে বাধ্য করছে। দ্বিতীয়ত, কোভিড-১৯ মহামারির সময় প্রযুক্তি খাতে চাহিদা বাড়ায় প্রতিষ্ঠানগুলো দ্রুত নিয়োগ দিয়েছিল। এখন চাহিদা কমে আসায় কর্মীবাহিনীর আকার ছোট করে টেকসই প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে চাচ্ছে তারা। তৃতীয়ত, শিল্পজুড়ে কাঠামোগত পুনর্গঠন চলছে। কর্মী ছাঁটাই শুধু উদ্ভাবনের কারণে নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদে প্রতিষ্ঠানের টিকে থাকা ও প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়ানোর কৌশলের অংশ হিসেবে দেখা যাচ্ছে।

প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো ছাঁটাইয়ের বিষয়টি এখন আরও কৌশলীভাবে উপস্থাপন করছে। তারা এমনভাবে তথ্য প্রকাশ করছে, যাতে জনমনে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া কম হয় এবং ছাঁটাইকে কোম্পানির বৃহত্তর লক্ষ্য ও পরিকল্পনার সঙ্গে যুক্ত করে দেখানো যায়।

বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, এই পরিস্থিতি সামনের দিনগুলোতেও অব্যাহত থাকতে পারে। ফলে বিশ্বজুড়ে তথ্যপ্রযুক্তি খাতের কর্মীদের জন্য এটি এক অস্থির সময়, যেখানে নিরাপদ কর্মসংস্থান দিন দিন দুর্লভ হয়ে উঠছে।