
প্রতিবেদক: সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান আইসিবি ফিন্যান্সিয়াল গ্রুপ বাংলাদেশে কার্যক্রম শুরু করেছিল ২০০৮ সালে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত এক উন্মুক্ত নিলামের মাধ্যমে তারা আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক (সাবেক ওরিয়েন্টাল ব্যাংক)–এর ৫৩ শতাংশ শেয়ার কিনে নেয় এবং প্রায় ৩৫০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে। কিন্তু সেই বিনিয়োগ এখন অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে, এবং ব্যাংকের ওপর আর তাদের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই।
শর্ত অনুযায়ী, বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশে ওরিয়েন্টাল ব্যাংকের শেয়ার তাদের হাতে দেওয়ার কথা ছিল, আর এসব শেয়ারে কোনো পূর্ব দায় থাকবে না—এমন নিশ্চয়তা দিয়েই আইসিবি ফিন্যান্সিয়াল গ্রুপ বিনিয়োগ করেছিল। তবে বাস্তবে দেখা যায়, ওরিয়েন্টাল ব্যাংকের সাবেক শেয়ারধারীরা বাংলাদেশ ব্যাংকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের করে। ফলে শেয়ার হস্তান্তরের প্রক্রিয়া আটকে যায়।
এই কারণে আইসিবি ফিন্যান্সিয়াল গ্রুপ তাদের নিয়ন্ত্রণ হারায় এবং কোনো সিদ্ধান্ত কার্যকর করতেও পারছে না। আর্থিক দুরবস্থার কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক চলতি বছরের এপ্রিল মাসে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বাতিল করে, নিয়ন্ত্রণ নেয় নিজের হাতে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা বর্তমানে ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন।
এ অবস্থায় আইসিবি ফিন্যান্সিয়াল গ্রুপ ক্ষতিপূরণ দাবি করেছে, এবং বলেছে—ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ ফিরিয়ে না দিলে আন্তর্জাতিক আদালতে যাবে। এই বিষয়ে ৭ জুলাই বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের কাছে একটি চিঠি পাঠান প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারপারসন জোসেফিন সিভারেতনাম।
চিঠিতে বলা হয়েছে,আমরা আশা করি আপনি দ্রুত উদ্যোগ নেবেন। না হলে ন্যায়বিচার পেতে আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়া ছাড়া আমাদের কোনো বিকল্প থাকবে না।”
চিঠির অনুলিপি পাঠানো হয়েছে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ও বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন (আশিক চৌধুরী)–কে।
চিঠিতে আরও অভিযোগ করা হয় যে, বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের পূর্ব প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন করেছে। আইসিবি ফিন্যান্সিয়াল গ্রুপের পক্ষে নিয়োগ দেওয়া নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালকের নিয়োগ অনুমোদন দেওয়া হয়নি। এর ফলে বিনিয়োগকারীদের আস্থা নষ্ট হয়েছে। তারা মনে করছে, এখন কেউ এই ব্যাংকে নতুন করে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাবে না।
শেয়ার হস্তান্তরের ওপর হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা শেয়ারের অবাধ লেনদেনকে ব্যাহত করছে এবং কৌশলগত বিনিয়োগকারীদের জন্য এটি একটি নেতিবাচক বার্তা—বলা হয়েছে চিঠিতে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বিষয়টি স্বীকার করে বলেন,আইসিবি ফিন্যান্সিয়াল গ্রুপ আগ্রহ নিয়ে বিনিয়োগ করেছিল। এখন যদি রাষ্ট্রীয় সহায়তায় আইনি সমাধান হয়, তাহলে সেটি সবচেয়ে ভালো হবে।
এই জটিল পরিস্থিতি শেষ পর্যন্ত কোথায় গিয়ে পৌঁছাবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে স্পষ্ট, একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈদেশিক বিনিয়োগ কার্যত ঝুঁকিতে পড়েছে, যার প্রভাব ভবিষ্যতে অন্যান্য বিদেশি বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও নেতিবাচক বার্তা দিতে পারে।