
প্রতিবেদক: চার প্রকৌশলী ২০১৬ সালে গাজীপুরের শ্রীপুরে এমিনেন্স ইলেকট্রিক ওয়্যার অ্যান্ড কেব্লস লিমিটেড নামে একটি বৈদ্যুতিক তার ও কেবল উৎপাদন কারখানা প্রতিষ্ঠা করেন। প্রকল্পটির ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল বলে মনে করে ন্যাশনাল ব্যাংকের নেতৃত্বে চারটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানটিকে অর্থায়ন দেয়। তবে ডলারের মূল্য বৃদ্ধির পাশাপাশি সময়মতো চলতি মূলধন না পাওয়ায় উৎপাদন শুরু করতে না পারায় শতকোটি টাকার ঋণ খেলাপি হয়ে পড়ে। এতে অর্থায়নকারী ন্যাশনাল ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক ও লংকাবাংলা ফাইন্যান্স বিপাকে পড়ে।
বর্তমানে আকিজ বশির গ্রুপ এই কারখানা কিনে নিচ্ছে এবং প্রায় ১১০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করার চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে। ইতিমধ্যে ঋণের অংশ শোধ শুরু করেছে আকিজ বশির গ্রুপ। আগামী অক্টোবরের মধ্যে পুরো ঋণ পরিশোধ করে কারখানার মালিকানা গ্রহণ করবে তারা। এ পদক্ষেপের মাধ্যমে আকিজ বশির গ্রুপ বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের পণ্য উৎপাদনে বড় পরিসরে যাত্রা শুরু করতে চায়।
ব্যাংক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রকল্পটি কিনে আকিজ বশির গ্রুপ লাভবান হয়েছে, একই সঙ্গে ঋণ সংক্রান্ত সমস্যা থেকে মুক্তি পেয়েছে অর্থায়নকারী ব্যাংকগুলো। ন্যাশনাল ব্যাংক ও এক্সিম ব্যাংক তাদের দেওয়া অর্থ ফেরত পেতে যাচ্ছে, যা আমানতকারীদের জন্যও উপকারী হবে। এমিনেন্স কিনে নেওয়ার ফলে আকিজ বশির গ্রুপ দ্রুত উৎপাদন শুরু করতে পারবে।
লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হুমায়রা আজম বলেন, ‘ঋণের একটি অংশ আমরা পেয়ে গেছি এবং খুব দ্রুত বাকি টাকা পাবো। বড় শিল্প গ্রুপগুলো এগিয়ে এলে কারখানা বন্ধ হওয়ার ঝুঁকি কমবে।’
প্রকল্পটি গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার গোদারচালা এলাকায় অবস্থিত। এখানে অ্যালুমিনিয়াম ও কপার বৈদ্যুতিক কেবলসহ বিভিন্ন ধরনের কেবল উৎপাদনের বার্ষিক ক্ষমতা ৬৭,১৫০ কিলোমিটার। প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয় ১১২ কোটি টাকা, যার মধ্যে ৬৯ কোটি টাকা ন্যাশনাল ব্যাংকের নেতৃত্বে অর্থায়ন করা হয়। বাকি অংশ উদ্যোক্তারা যোগ করেন।
প্রকল্পটি পরিকল্পিত সময়কালে ডলারের দর কম ছিল, কিন্তু পরবর্তীতে ডলারের মূল্যবৃদ্ধি ও করোনার প্রভাবের কারণে নির্মাণ ব্যয় বেড়ে যায়। ২০২১ সালে যন্ত্রপাতি আমদানির জন্য ৭৮ লাখ ডলারের ঋণপত্র খোলা হয়, যা পরবর্তীতে ঋণ বেড়ে ১১৫ কোটি টাকা হয়। মূলধন সমস্যায় উৎপাদন শুরু হয়নি। এখন আকিজ বশির গ্রুপ কারখানাটি কিনে উৎপাদন শুরু করতে যাচ্ছে।
আকিজ বশির গ্রুপের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা মো. খোরশেদ আলম জানান, ‘আগামী নভেম্বর থেকে কারখানায় উৎপাদন শুরু করব, শুরু হবে কম ভোল্টেজের তার উৎপাদন দিয়ে। স্থানীয় চাহিদা বিবেচনায় বাজারে বড় আকারে পণ্য ছাড়ার পরিকল্পনা রয়েছে।’
প্রকল্প বিক্রির প্রক্রিয়া এক বছর ধরে চলছিল। আকিজ বশির গ্রুপ একাধিক কারখানা কেনার চেষ্টা করছিল এবং শেষে এমিনেন্সের সঙ্গে সমঝোতায় পৌঁছায়। ৬ আগস্ট চুক্তি সম্পন্ন হয়, যার মাধ্যমে তারা ঋণ ও দায়দেনা পরিশোধসহ কর্মকর্তা-কর্মচারী সুবিধা নিশ্চিত করবে।
অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর ঋণ ভাগাভাগি অনুযায়ী ন্যাশনাল ব্যাংকের ঋণ ৮৪.৭২ কোটি, রূপালী ব্যাংকের ১৬.২৭ কোটি, লংকাবাংলা ফাইন্যান্সের ৪.১৩ কোটি ও এক্সিম ব্যাংকের ২.৬০ কোটি টাকা। ইতিমধ্যে কিছু ঋণ আদায় করা হয়েছে। এক্সিম ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মাকসুদা খানম বলেন, ‘আমরা ইতিমধ্যে ৫ লাখ টাকা পেয়েছি এবং ৬০ দিনের মধ্যে বাকি টাকা পেয়ে যাবো। এটা আমাদের জন্য ভালো হয়েছে।’