আদানি পাওয়ারের সঙ্গে বিদ্যুৎ চুক্তির বিপদ ও বকেয়া পরিশোধের জটিলতা

প্রতিবেদক: বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) কর্তৃক আদানি পাওয়ারের বিপুল পরিমাণ পাওনা বিলের ব্যাপারে দীর্ঘদিন ধরে অমীমাংসিত সমস্যা রয়েছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়, প্রতি মাসে গড়ে ২০-৩০ মিলিয়ন ডলার বিল পরিশোধ করা হলেও, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষমতা গ্রহণের পর এ পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে ৮০-৮৫ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত পৌঁছেছে। চলতি মার্চ মাসে বিপিডিবি ৯৫ মিলিয়ন ডলারের বেশি বিল পরিশোধ করেছে আদানি পাওয়ারকে।

এদিকে, আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে আদানি পাওয়ারের সঙ্গে বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি বাতিলের জন্য বিশেষ আইন প্রণয়নের দাবি ওঠে, এবং ২০২২ সালের নভেম্বরে এ চুক্তির বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। গত অক্টোবরে জাতীয় পর্যালোচনা কমিটি গঠন করা হয়, এবং তাদের সুপারিশে আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

তবে, এ মুহূর্তে বিপিডিবি ও আদানি গ্রুপের মধ্যে চুক্তি নিয়ে কোন উদ্বেগ নেই, কারণ অন্তর্বর্তী সরকারও এখন আদানির বকেয়া পরিশোধ ও বিদ্যুতের বাড়তি সরবরাহ নিতে মনোযোগী। শ্রীলঙ্কা এবং কেনিয়া ইতোমধ্যে আদানি গ্রুপের সঙ্গে করা বিদ্যুৎ চুক্তি বাতিল করেছে দুর্নীতি ও অন্যান্য অভিযোগের কারণে।

বর্তমানে, আদানি গ্রুপ বাংলাদেশে ১,৬০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে, যার মধ্যে ১,৪৯৬ মেগাওয়াট স্থাপিত ক্ষমতাসম্পন্ন একটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র রয়েছে। তবে, বিপিডিবি জানায়, প্রতি মাসে গড়ে ৭০-৭৫ মিলিয়ন ডলার বিল আসলেও, অক্টোবর থেকে এই বিলের পরিমাণ ৮৫ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে, যার মধ্যে বকেয়া বিলও অন্তর্ভুক্ত।

বিপিডিবি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. রেজাউল করিম জানিয়েছেন, আদানির বকেয়া পরিশোধ করা হচ্ছে, তবে নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারিত নয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের ভর্তুকির অর্থ পাওয়ার পর পরিশোধের উদ্যোগ নেয়া হবে। আদানি গ্রুপের তথ্য অনুযায়ী, বিদ্যুৎ বিক্রি বাবদ বিপিডিবির কাছে এখনো ৭০০ মিলিয়ন ডলার পাওনা রয়েছে, তবে বিপিডিবির দাবি, এই পরিমাণ ৬৫০ মিলিয়ন ডলার হতে পারে।

আদানির সঙ্গে এই বকেয়া বিলের বিষয়টি নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে আলোচনা চলছে। বিপিডিবি জানায়, বকেয়া বিল পরিশোধের কোন নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই, তবে বিষয়টি অর্থ মন্ত্রণালয়ের ওপর নির্ভরশীল। সরকার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের সব বকেয়া দ্রুত পরিশোধের চেষ্টা করছে, যাতে ভবিষ্যতে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থায় কোন সংকট না হয়।