
প্রতিবেদক:ভারতের আদানি গ্রুপের বিদ্যুৎকেন্দ্রে ব্যবহৃত কয়লার মূল্য নির্ধারণ নিয়ে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) সঙ্গে মতানৈক্যে জড়িয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। আন্তর্জাতিক বাজারের কয়লার সূচকের গড় মূল্য ধরে আদানি যে মূল্য দাবি করে, তা তুলনামূলক বেশি বলে মনে করছে পিডিবি। এ নিয়ে দুই প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ইতোমধ্যে একাধিকবার চিঠি চালাচালি ও আলোচনা হলেও কোনো সমাধান আসেনি। এবার সরাসরি আলোচনায় বসার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
পিডিবি বলছে, সমমানের অন্য বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর চুক্তিতে যেখান থেকে কয়লা কেনা হয়, সেই দেশের বাজারমূল্য অনুযায়ী দাম নির্ধারণ করা হয়। উদাহরণ হিসেবে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র ইন্দোনেশিয়া থেকে দীর্ঘমেয়াদি চুক্তিতে কয়লা কেনে এবং সেখানে সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ পর্যন্ত ছাড় রয়েছে, যার সুবিধা পিডিবি পায়। রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্রেও ছাড়ের ভিত্তিতে কয়লা কেনা হয়। কিন্তু আদানি নিজের খনি থেকে কয়লা সরবরাহ করে এবং তাদের চুক্তিতে এ ধরনের ছাড়ের কোনো বিধান নেই। ফলে আদানি তুলনামূলক বেশি দামে কয়লা দিচ্ছে।
পিডিবির এক কর্মকর্তা জানান, অন্যান্য বিদ্যুৎকেন্দ্র কয়লা কেনার প্রকৃত দামে বিল করে। কিন্তু আদানি আন্তর্জাতিক দুটি কয়লার সূচক থেকে উন্নতমানের কয়লার গড় মূল্য হিসাব করে, তারপর সেই হিসাব অনুযায়ী তাদের ব্যবহৃত কয়লার দাম নির্ধারণ করে। অথচ প্রকৃত মানের ভিত্তিতে দাম হিসাব করলে প্রতি টনে ২০ থেকে ২৫ ডলার কম পড়ে।
বকেয়া পরিশোধ নিয়েও রয়েছে আলোচনার বিষয়। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় বিল পরিশোধে বিলম্ব হওয়ায় আদানির পাওনা দুই বিলিয়ন ডলারে পৌঁছে যায়। তবে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার নিয়মিত মাসিক বিলের পাশাপাশি বকেয়া পরিশোধ করায় এই পরিমাণ অনেকটা কমে এসেছে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানায়, আদানির বর্তমান বকেয়া এখন ৯০০ মিলিয়ন ডলার। তবে পিডিবির চেয়ারম্যান রেজাউল করিম জানিয়েছেন, বকেয়ার প্রকৃত অঙ্ক এত বেশি হওয়ার কথা নয়, তবে সঠিক পরিমাণ এখনই বলা যাচ্ছে না।
চেয়ারম্যান আরও জানান, কয়লার মূল্য নির্ধারণ নিয়ে আদানির পদ্ধতি নিয়ে তাদের আপত্তি রয়েছে। যে দেশ থেকে কয়লা কেনা হয়, সেই দেশের দাম অনুসারে পিডিবি বিল পরিশোধ করে। কিন্তু আদানি আন্তর্জাতিক সূচকের গড় মূল্য ধরে, যা নিয়ে দ্বিমত আছে। এ নিয়ে আদানি আলোচনার জন্য চিঠি দিয়েছে এবং শিগগিরই বৈঠক হবে। এক বৈঠকে সমস্যার সমাধান না-ও হতে পারে, তবে আলোচনা অব্যাহত থাকবে।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে ভারতের ঝাড়খণ্ড রাজ্যের গোড্ডা জেলায় ১,৪৯৮ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে চুক্তি করে বাংলাদেশ সরকার। একই বছর আদানি গ্রুপের সঙ্গে ২৫ বছরের জন্য বিদ্যুৎ ক্রয়ের চুক্তিও করে পিডিবি।