আন্দোলনের জেরে এনবিআরের বরখাস্তের সংখ্যায় রেকর্ড, প্রকাশ্যে আদেশ ছেঁড়ায় আরও ৩ কর পরিদর্শক বরখাস্ত

প্রতিবেদক: জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সংস্কার আন্দোলনের জেরে কর্মকর্তাদের বরখাস্তের ধারা অব্যাহত রয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বদলির চিঠি প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলার অভিযোগে আরও তিনজন কর পরিদর্শককে সাময়িক বরখাস্ত করেছে এনবিআর। এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান এ–সংক্রান্ত পৃথক তিনটি আদেশে সই করেছেন।

 বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তারা হলেন—আয়কর গোয়েন্দা ও তদন্ত ইউনিটের আবদুল্লাহ আল মামুন, কর অঞ্চল-৬-এর কর পরিদর্শক রুহুল আমিন এবং কর অঞ্চল-২-এর কর পরিদর্শক লোকমান আহমেদ। আদেশে বলা হয়েছে, পাঁচজন উপ–কর কমিশনারের বদলির আদেশ প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলা এবং তা সমর্থন করে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করায় তাঁদের বিরুদ্ধে সরকারি চাকরি আইন, ২০১৮-এর ৩৯(১) ধারায় বিভাগীয় কার্যধারা গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বরখাস্তকালীন তাঁরা বিধি অনুযায়ী খোরপোষ ভাতা পাবেন।

এর আগে বুধবারও উপকমিশনার থেকে নিরাপত্তাপ্রহরী পদ পর্যন্ত ৯ কর্মকর্তা-কর্মচারী বরখাস্ত হন। মঙ্গলবার একই অভিযোগে বরখাস্ত করা হয় আরও ১৪ জন শুল্ক, কর ও ভ্যাট কর্মকর্তাকে। এ নিয়ে গত কয়েক দিনে এনবিআরের বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তার সংখ্যা দাঁড়াল ২৭ জনে।

মঙ্গলবার বরখাস্ত হওয়া কর্মকর্তাদের মধ্যে ছিলেন মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের অতিরিক্ত কমিশনার হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার, যিনি এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি; কর অঞ্চল-৮-এর অতিরিক্ত কমিশনার মির্জা আশিক রানা, যিনি পরিষদের সহসভাপতি; এবং আরও কয়েকজন যুগ্ম ও উপকমিশনার পদমর্যাদার কর্মকর্তা।

সূত্র জানায়, এনবিআরের বিলুপ্তি এবং দুই ভাগে বিভক্ত করে ‘রাজস্ব নীতি’ ও ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা’ বিভাগ গঠনের সরকারি আদেশের পর গত মে মাস থেকে আন্দোলনে নামেন এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আন্দোলন চলে দেড় মাস ধরে, যার মধ্যে ২৮ ও ২৯ জুন ছিল সর্বাত্মক কর্মবিরতি। ব্যবসায়ী নেতাদের মধ্যস্থতায় আন্দোলন প্রত্যাহার হলেও এরপর থেকে বরখাস্ত ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ শুরু হয়।

এ পর্যন্ত একজন কমিশনারসহ তিনজন এনবিআর সদস্যকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠানো হয়েছে এবং চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের তৎকালীন কমিশনারকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। একই সঙ্গে এনবিআরের ২ সদস্যসহ ১৬ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তদন্ত শুরু করেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, এঁদের বেশিরভাগই এনবিআর সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন।

এই প্রেক্ষাপটে এনবিআরের চলমান প্রশাসনিক ব্যবস্থা ও সাংগঠনিক কাঠামোতে এক অভূতপূর্ব সঙ্কট তৈরি হয়েছে বলে অভ্যন্তরীণ পর্যবেক্ষকদের মত। বিশ্লেষকেরা বলছেন, নীতিনির্ধারণী সংস্কারের প্রক্রিয়ায় সব পক্ষের মতামতকে গুরুত্ব না দিলে এরূপ অস্থিরতা আরও বাড়তে পারে।