আপেল–মাল্টায় বছরে ১০ হাজার কোটি টাকার বাজার, ব্যয়ে চাপ ক্রেতার ঘাড়ে

প্রতিবেদক: সারা বছর ফলের দোকানে পাওয়া যায় বিদেশি আপেল ও মাল্টা। স্বাদে ভিন্ন, পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ—এই দুই ফলের প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ বরাবরই বেশি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে এই দুই বিদেশি ফল কিনতে গড়ে প্রতি পরিবারকে ব্যয় করতে হয়েছে প্রায় আড়াই হাজার টাকা। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও বাজারদর বিশ্লেষণ বলছে, গত অর্থবছরে আপেল ও মাল্টা আমদানিতে মোট খরচ হয়েছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা।

আমদানি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত অর্থবছরে বাংলাদেশে আপেল আমদানি হয়েছে ১৬ কোটি ১৪ লাখ কেজি এবং মাল্টা আমদানি হয়েছে ১৬ কোটি ৮৬ লাখ কেজি। অর্থাৎ, সব মিলিয়ে ৩৩ কোটিরও বেশি কেজি বিদেশি ফল আমদানি করা হয়েছে। জাতিসংঘের জনসংখ্যা তহবিল (UNFPA) অনুযায়ী, বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১৭ কোটি ৫৭ লাখ। সেই হিসাবে, প্রতি নাগরিক গড়ে ১ কেজি ৮৭৮ গ্রাম আপেল–মাল্টা খেয়েছেন, যার পেছনে মাথাপিছু খরচ দাঁড়িয়েছে ৫৬২ টাকা এবং পরিবারপ্রতি খরচ ২ হাজার ৪৩০ টাকা।

বাজারদরের দিকে তাকালে, গত অর্থবছরে সাধারণ আপেল বিক্রি হয়েছে গড়ে ৩০০–৩২০ টাকা কেজি দরে। দক্ষিণ আফ্রিকার ‘রয়েল গালা’ জাতের আপেল বিক্রি হয়েছে ৩৪০–৩৮০ টাকায়। মাল্টার গড় দাম ছিল প্রায় ২৮০ টাকা। চট্টগ্রামের খুচরা বিক্রেতা মোহাম্মদ সাইফুলের মতে, বছরজুড়ে এই দরের খুব একটা হেরফের হয়নি।

ব্যয়ের কাঠামো বিশ্লেষণ করলে, আপেল আমদানিতে ১০ কোটি ২২ লাখ ডলার খরচ হয়েছে, যা পেয়েছে ১৫টি দেশের ৭০২টি রপ্তানি প্রতিষ্ঠান। চীন, দক্ষিণ আফ্রিকা, পোল্যান্ড ও ভারত পেয়েছে এর বড় অংশ। সরকার আপেল আমদানিতে রাজস্ব পেয়েছে ১ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা। মাল্টা আমদানিতে ব্যয় হয়েছে ১০ কোটি ডলার, যা গেছে ৭টি দেশের ৮৮১টি প্রতিষ্ঠানে। মাল্টা আমদানিতে সরকার রাজস্ব পেয়েছে ১ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা।

অর্থাৎ, মোট ৯ হাজার ৯৬৭ কোটি টাকার বাজারে ২ হাজার ৪৩৯ কোটি টাকা গেছে বিদেশি চাষিদের হাতে (ডলারের মাধ্যমে), ৩ হাজার ২২০ কোটি টাকা পেয়েছে সরকার (শুল্ক ও কর হিসেবে), আর বাকি টাকা ধাপে ধাপে গেছে আমদানি, পরিবহন, সংরক্ষণ, পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে।

এই বাজারে কর্মসংস্থানও কম নয়। এনবিআরের তথ্য অনুযায়ী, আমদানিতে যুক্ত ৪৬৯টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এরপর পাইকারি, পরিবহন, প্যাকেজিং এবং খুচরা বিক্রেতা পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে বিপুলসংখ্যক মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম জানান, ফল আমদানি ও বিপণন খাতে ২০ লাখের বেশি মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত।

তবে প্রশ্ন থেকেই যায়—আপেল-মাল্টার স্বাদ কে পেলেন? গড় হিসাব বলছে, অনেকেই খেয়েছেন, কেউ কেউ বেশি, কেউ কম, আবার কেউ হয়তো একটি আপেলও খাননি। সেক্ষেত্রে যারা খাননি, তারা অন্যদের চেয়ে পিছিয়ে থেকেছেন এই খরচ ও পুষ্টির সুযোগে।

সারসংক্ষেপে, আপেল-মাল্টার পেছনে বছরে ১০ হাজার কোটি টাকার বাজার গড়ে ওঠার পাশাপাশি কর্মসংস্থান, বৈদেশিক ব্যয় ও সরকারের রাজস্ব আদায়ের এক বড় উৎসে পরিণত হয়েছে। তবে এই চাহিদা ও ব্যয়ের ভার যেন ভবিষ্যতে সাধারণ মানুষের জন্য অপ্রতিরোধ্য হয়ে না দাঁড়ায়, সেদিকে লক্ষ্য রাখা জরুরি।