আয়কর রিটার্নে জীবনযাত্রার ব্যয় দেখানো কেন গুরুত্বপূর্ণ

প্রতিবেদক: আপনি যখন বার্ষিক আয়কর বিবরণী বা রিটার্ন জমা দেন, তখন শুধুমাত্র আয়ের তথ্য দিলেই হয় না—জীবনযাত্রার ব্যয়ের তথ্যও দিতে হয়। কারণ কর কর্মকর্তারা জানতে চান, আপনার আয়ের সঙ্গে খরচের কোনো অসংগতি রয়েছে কি না। যদি দেখা যায়, কোনো করদাতার জীবনযাত্রার মান তার ঘোষিত আয়ের চেয়ে অনেক উঁচু, তাহলে বিষয়টি বিশেষ নজরে আসে এবং কর কর্মকর্তারা সেই রিটার্ন বিশেষভাবে যাচাই–বাছাই করেন। তাই একজন করদাতার জন্য তার ব্যয়ের সঠিক হিসাব দেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এই ব্যয় সংক্রান্ত তথ্য আইটি ১১ (গ) ফরমের মাধ্যমে জমা দিতে হয়। এখানে মাসওয়ারি হিসাব নয়, বরং পুরো বছরের খরচের বিবরণ দিতে হয়। মূলত ৯টি গুরুত্বপূর্ণ খাতে ব্যয়ের তথ্য রিটার্নে উল্লেখ করতে হয়।

প্রথমত, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক ভরণপোষণের খরচ—যার মধ্যে বাজার খরচ যেমন চাল, ডাল, তেল, লবণ, মাছ-মাংস প্রভৃতির ব্যয় অন্তর্ভুক্ত। দ্বিতীয়ত, আবাসন–সংক্রান্ত ব্যয়, যেমন বাসাভাড়া বা নিজের বাসার রক্ষণাবেক্ষণ খরচ। তৃতীয়ত, গাড়ির মালিক হলে ব্যক্তিগত যানবাহনের খরচ যেমন চালকের বেতন, জ্বালানি ও মেরামতের হিসাব দিতে হবে।

চতুর্থত, সেবাসংক্রান্ত ব্যয় যেমন বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, মোবাইল, ইন্টারনেট ও গৃহকর্মীর বেতন—এই খাতেও নিয়মিত ব্যয়ের তথ্য দিতে হয়। পঞ্চমত, সন্তানের শিক্ষা ব্যয় যেমন স্কুল ফি, বই–খাতা, কোচিং ফি ইত্যাদি জানাতে হবে। ষষ্ঠত, দেশ বা বিদেশে ভ্রমণের ব্যয় ও অবকাশ যাপনের খরচকেও হিসাবের আওতায় আনতে হবে।

সপ্তমত, উৎসব ও বিশেষ দিনের ব্যয় যেমন জন্মদিন, বিবাহবার্ষিকী, সামাজিক অনুষ্ঠান ইত্যাদির জন্য খরচের তথ্য দিতে হয়। অষ্টমত, উৎসে কর্তিত কর ও আগের বছরের রিটার্নের ভিত্তিতে প্রদত্ত আয়কর–সারচার্জ সম্পর্কেও বিস্তারিত জানাতে হয়। নবমত, কোনো প্রাতিষ্ঠানিক বা অন্যান্য উৎস থেকে নেওয়া ব্যক্তিগত ঋণের সুদ বাবদ কত টাকা পরিশোধ করেছেন, সেটিও রিটার্নে উল্লেখ করতে হয়।

সব মিলিয়ে, আপনার রিটার্নে সঠিক ও বাস্তবসম্মত জীবনযাত্রার ব্যয়ের বিবরণ প্রদান করাই দায়িত্বশীল করদাতার পরিচয়, যা আপনাকে ভবিষ্যতে অপ্রত্যাশিত তদন্ত বা হয়রানি থেকে রক্ষা করতে পারে।