
প্রতিবেদক: দেশের বাজারে গত বছরের তুলনায় এবার আলুর দাম তুলনামূলক কম। এর প্রভাবে সদ্য বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে আলু রপ্তানি গত তিন বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ হয়েছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন—দেশে দাম কম থাকায় রপ্তানির সুযোগ বেড়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (ডিএই) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে ৬২ হাজার ১৩৫ টন আলু রপ্তানি হয়েছে, যা ২০২২ সালের পর সর্বোচ্চ। রপ্তানিকারকদের ভাষ্য, গত মৌসুমে তারা প্রতি কেজি আলু ৭ থেকে ২০ টাকা দরে কিনেছেন—যেখানে আগের মৌসুমে কিনতে হয়েছে ৩০ টাকায়।
তবে অনেক কৃষক উৎপাদন খরচ না তুলেই আলু বিক্রি করেছেন। মাঠ পর্যায়ে অনেক কৃষককে প্রতি কেজি ১১ টাকায় আলু বিক্রি করতে হয়েছে। অথচ ডিএই উৎপাদন খরচ নির্ধারণ করেছিল গড়ে ১৪ টাকা। উত্তরাঞ্চলের কিছু জেলায় এই খরচ আরও বেশি, প্রায় ২০ টাকা কেজি প্রতি।
২০২৪-২৫ অর্থবছরে আলু চাষের পরিমাণও বেড়েছে। রেকর্ড ৫ লাখ ২৪ হাজার হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি। এর পেছনে গত বছরের নভেম্বরে বাজারে আলুর দাম ৮০ টাকা ছাড়িয়ে যাওয়াও প্রভাব ফেলেছে।
যদিও সরকার এখনো এ মৌসুমে আলু উৎপাদনের আনুষ্ঠানিক তথ্য প্রকাশ করেনি, তবে বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন ধারণা করছে—মোট উৎপাদন এক কোটি ২০ লাখ টন হতে পারে।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) অনুসারে, ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ থেকে আলু রপ্তানি শুরু হয়। বর্তমানে আলু রপ্তানি হচ্ছে মালয়েশিয়া, ইউএই, সিঙ্গাপুর, নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও বাহরাইনে।
দেশের শীর্ষ রপ্তানিকারক তাওহীদুল ইসলাম জানিয়েছেন, গত অর্থবছরে তিনি ৩০ হাজার টন আলু রপ্তানি করেছেন, যেখানে আগের বছর করেছিলেন মাত্র ১,৪০০ টন। তাঁর মতে, দেশে দাম কম থাকায় রপ্তানি বেড়েছে।
তবে রপ্তানির প্রসার ব্যাহত হচ্ছে অবকাঠামোগত দুর্বলতা ও স্বাস্থ্যবিধি মানার ঘাটতির কারণে। রপ্তানিকারক রাশেদ শামীম জানান, এসব সীমাবদ্ধতায় কম্বোডিয়া, হংকং ও ফিলিপাইন–এর বাজার হারাচ্ছে বাংলাদেশ।
এ পরিস্থিতিতে ডিএই চাষিদের রপ্তানিমুখী জাতের আলু (যেমন—গ্রানোলা, সান্তানা, কুমারী) চাষে উৎসাহ দিচ্ছে।
হর্টেক্স ফাউন্ডেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মো. রফিকুল আমিন বলছেন, রপ্তানি বাড়ায় কৃষকরা কিছুটা স্বস্তি পেলেও অনেকেই লোকসান গুনছেন।
২০১৫-১৬ অর্থবছর থেকে বাংলাদেশ গড়ে প্রতি বছর ৫০ হাজার টন আলু রপ্তানি করে আসছে। ব্যবসায়ীদের মতে, বছরে সার্বিকভাবে আলু রপ্তানি হলেও ৬০ শতাংশই হয় ফসল তোলার মৌসুমে।