
প্রতিবেদক: বাংলাদেশের সম্ভাবনাময় রপ্তানি খাত হিসেবে আসবাবশিল্প নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে আলোচনা হলেও কাঙ্ক্ষিত অগ্রগতি হয়নি। শিল্পটি বৈশ্বিক বাজারে প্রতিযোগিতা করতে হিমশিম খাচ্ছে কাঁচামাল আমদানির উচ্চ শুল্ক ও ব্যবসায়িক ব্যয়ের কারণে। সেই সঙ্গে বন্ড সুবিধা পাওয়ার বিষয়ে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত না হওয়ায় হতাশ উদ্যোক্তারা।
রপ্তানি বাড়াতে সরকার কয়েক বছর আগে আসবাবশিল্পকে বন্ড লাইসেন্স দেওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিলেও, তা এখনও বাস্তবায়িত হয়নি। বছর দুয়েক ধরে এ বিষয়টি ফাইলবন্দি অবস্থায় রয়েছে বলে অভিযোগ উদ্যোক্তাদের।
এই প্রেক্ষাপটে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাড়তি ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণা আসবাব রপ্তানিকারকদের মধ্যে নতুন উদ্বেগ তৈরি করেছে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রই বাংলাদেশের আসবাবপত্রের সবচেয়ে বড় রপ্তানি গন্তব্য।
রপ্তানিকারকেরা বলছেন, পাল্টা শুল্ক কার্যকর হলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আসবাব রপ্তানি হুমকির মুখে পড়বে। এ অবস্থায়, ১০০ শতাংশ ব্যাংক গ্যারান্টির বিপরীতে হলেও কাঁচামাল আমদানিতে বন্ড সুবিধা প্রদান জরুরি।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪–২৫ অর্থবছরে আসবাবপত্র রপ্তানি হয়েছে ৪ কোটি ৫৫ লাখ ডলারের, যা আগের বছরের তুলনায় ০.৩৭ শতাংশ কম। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রেই গেছে প্রায় ৪৩ শতাংশ রপ্তানি—১ কোটি ৯৭ লাখ ডলার মূল্যের।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, আসবাব খাতে প্রায় ২৫ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যুক্ত। দেশের জিডিপিতে এই খাতের অবদান ১.২ শতাংশের মতো। বর্তমানে ৪০ হাজারের বেশি ছোট-বড় প্রতিষ্ঠান আসবাব উৎপাদন ও বিপণনে সক্রিয়।
তবে উদ্যোক্তাদের অভিযোগ, প্রয়োজনীয় কাঁচামাল দেশেই উৎপাদন না হওয়ায় আমদানির ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে। সেই কাঁচামালের ওপর বিভিন্ন ধাপে ১০ থেকে ১২৭ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক দিতে হয়, যা প্রতিযোগিতা সক্ষমতাকে হ্রাস করছে।
২০২১ সালে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন আসবাবসহ চারটি খাতকে বন্ড সুবিধার আওতায় আনার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশ করে। এরপর ২০২৩ সালের মার্চে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত রপ্তানিসংক্রান্ত জাতীয় কমিটির বৈঠকে নীতিগতভাবে বন্ড সুবিধা দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এই সিদ্ধান্ত আমদানি নীতি আদেশ ২০২১–২৪, রপ্তানি নীতি ২০২১–২৪ এবং ট্যারিফ পলিসি ২০২৩-এ অন্তর্ভুক্ত করা হয়। কিন্তু তা আজও বাস্তবে কার্যকর হয়নি।
দেশের শীর্ষস্থানীয় আসবাব ব্র্যান্ড হাতিল–এর চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম এইচ রহমান বলেন, “দেশে কিছু কাঁচামাল থাকলেও তা রপ্তানির উপযোগী মানে ও পরিমাণে পর্যাপ্ত নয়। কাঠ, বোর্ড ও বিভিন্ন ফিটিংস আমদানির ফলে খরচ ও উৎপাদন সময় বেড়ে যায়। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে শুল্ক বাড়লে তা ভয়াবহ প্রভাব ফেলবে।”
তিনি আরও বলেন, “রপ্তানি বহুমুখীকরণে গুরুত্ব না দিলে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দিতে পারে। আসবাবশিল্পে যথাযথ কৌশল, সহায়তা ও নীতিমালার মাধ্যমে এই খাতকে প্রধান রপ্তানি খাতে পরিণত করা সম্ভব।”
সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, রপ্তানি নীতি, আমদানি নীতি আদেশ ও জাতীয় শুল্ক নীতির আলোকে আংশিক রপ্তানিমুখী শিল্পগুলোকে দ্রুত বন্ড সুবিধার আওতায় আনতে না পারলে এই খাতের উন্নয়ন থেমে থাকবে। পাশাপাশি প্রতিযোগী দেশগুলোর সঙ্গে টিকে থাকাও কঠিন হয়ে উঠবে।