ইইউ ও যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বাংলাদেশের ঈর্ষণীয় অগ্রগতি

প্রতিবেদক: ২০২৫ সালের প্রথম চার মাসে (জানুয়ারি–এপ্রিল) ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) বাজারে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে রেকর্ড প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ইউরোস্ট্যাটের প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, এ সময়ে বাংলাদেশের রপ্তানি ২৫ দশমিক ৩ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৫৪ বিলিয়ন ইউরোতে। গত বছর একই সময়ে এ অঙ্ক ছিল ৬ দশমিক ০২ বিলিয়ন ইউরো, অর্থাৎ এক বছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১ দশমিক ৫২ বিলিয়ন ইউরো।

এই প্রবৃদ্ধির মাধ্যমে চীনের পর ইইউতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পোশাক রপ্তানিকারক দেশের অবস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো, প্রবৃদ্ধির হারে বাংলাদেশ চীনসহ সব প্রতিযোগী দেশকে ছাড়িয়ে গেছে, ইউরোর হিসাবে যা সর্বোচ্চ।

চীন একই সময়ে ইইউতে ৭ দশমিক ৮৮ বিলিয়ন ইউরোর পোশাক রপ্তানি করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ২৩ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। অন্যদিকে, তুরস্কের রপ্তানি ৪ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ইউরোতে, যেখানে আগের বছর এটি ছিল ৩ দশমিক ০৩ বিলিয়ন ইউরো।

ভারতের রপ্তানি বেড়েছে ২১ দশমিক ৫ শতাংশ (১.৮৭ বিলিয়ন ইউরো), ভিয়েতনামের ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ (১.৩৮ বিলিয়ন ইউরো), পাকিস্তানের ২৫ দশমিক ১ শতাংশ (১.৩৩ বিলিয়ন ইউরো) এবং কম্বোডিয়ার সবচেয়ে দ্রুত প্রবৃদ্ধি ৩৩ দশমিক ৫ শতাংশ (১.৪৬ বিলিয়ন ইউরো)।

২০২৫ সালের জানুয়ারিতে বাংলাদেশ ইইউতে ১ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ইউরোর তৈরি পোশাক রপ্তানি করেছে, যা আগের বছরের তুলনায় ৬০ দশমিক ৯ শতাংশ বেশি। ফেব্রুয়ারিতে প্রবৃদ্ধি ছিল ২৮ শতাংশ, মার্চে ১৮ দশমিক ৬ শতাংশ এবং এপ্রিলে ৬ শতাংশ।

রপ্তানিকারকদের মতে, এই উচ্চ প্রবৃদ্ধির পেছনে রয়েছে—২০২৪ সালের শেষ ভাগের কিছু অর্ডার ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে পাঠানো, বছরের শুরুতে বড় অর্ডার এবং সম্ভাব্য বাজার ও লজিস্টিক ঝুঁকির কারণে আগেভাগে চালান প্রেরণ।

২০২৫ সালের প্রথম চার মাসে ইইউর মোট তৈরি পোশাক আমদানি ১৫ দশমিক ৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ দশমিক ৪২ বিলিয়ন ইউরো, যেখানে ২০২৪ সালে তা ছিল ২৬ দশমিক ২৯ বিলিয়ন ইউরো। এই বাড়তি আমদানির ৭০ শতাংশের বেশি এসেছে বাংলাদেশ ও চীনের কাছ থেকে।

ইইউর পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রেও বাংলাদেশ তৈরি পোশাক রপ্তানিতে শীর্ষ প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। ২০২৫ সালের জানুয়ারি-এপ্রিল সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানি দাঁড়িয়েছে ২৯৮ কোটি ৩০ লাখ ডলারে, যা আগের বছরের তুলনায় ২৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ বেশি।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগের অফিস অব টেক্সটাইলস অ্যান্ড অ্যাপারেলসের তথ্য অনুযায়ী, এই সময়ের মধ্যে ভারত থেকে রপ্তানি হয়েছে ২০০ কোটি ৯ লাখ ডলার, যা ২০ দশমিক ৩০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নির্দেশ করে।

গত দুই বছরে যুক্তরাষ্ট্র গড়ে বছরে ৭৮ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের পোশাক আমদানি করেছে, যার বড় অংশ এসেছে চীন, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ ও ভারত থেকে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, বিশ্ববাজারে চাহিদা পুনরুদ্ধার, প্রতিযোগী মূল্য, দক্ষ উৎপাদন ব্যবস্থা এবং স্থিতিশীল সরবরাহ ব্যবস্থাপনার কারণে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প আবারও শক্ত অবস্থানে ফিরে এসেছে।

তবে এই অগ্রগতি ধরে রাখতে হলে উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি, পরিবেশগত মানদণ্ড নিশ্চিতকরণ এবং প্রযুক্তিতে ব্যাপক বিনিয়োগের ওপর জোর দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।