ইন্টারনেট, মোবাইল এবং রেস্তোরাঁর খাবারসহ প্রায় ১০০ পণ্যের খরচ বাড়ছে

অনলাইন ডেক্স: প্রায় ১০০টি পণ্য ও সেবার ওপর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) এবং সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এতে মূল্যস্ফীতি আরও বৃদ্ধি পাবে এবং ভোক্তাদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়।

শনিবার থেকে মোবাইল ফোন, ইন্টারনেট, টিস্যু, আঙুর, আপেল, তরমুজ, তৈরি পোশাক, রেস্তোরাঁ, মিষ্টি, এলপি গ্যাস, হোটেল ভাড়া ও চশমার মতো পণ্যের ওপর নতুন ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক কার্যকর হবে।

নতুন নিয়ম অনুযায়ী, রেস্তোরাঁ, বিস্কুট ও কেক, আচার ও টমেটো সস, কাপড়, দর্জির দোকান, টয়লেট টিস্যু, ন্যাপকিন, টাওয়েল, মিষ্টি, ড্রাইভিং লাইসেন্স, নন-এসি হোটেল, চশমা, সানগ্লাস, মোটর ওয়ার্কশপ এবং লুব্রিকেন্ট তেলের ওপর ৫ শতাংশের পরিবর্তে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত ভ্যাট দিতে হবে।

শিল্প খাতেও ভ্যাট বৃদ্ধির প্রভাব পড়বে। বৈদ্যুতিক ট্রান্সফরমার, বৈদ্যুতিক খুঁটি, স্টিলের কোল্ড রোল্ড কয়েল, চুনাপাথর ও ডলোমাইটের মতো শিল্পপণ্যের ওপর ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে।

বাণিজ্যিক পর্যায়ে ওষুধের ওপর ভ্যাট ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭.৫ শতাংশ করার কারণে ওষুধের দাম বাড়বে। মুদ্রণ, সিনেমার টিকিট, মেরামত ও সার্ভিসিং, পরিচ্ছন্নতা সেবার ওপর ভ্যাট ১০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১৫ শতাংশ করা হয়েছে, যা এসব সেবার খরচ বাড়াবে।

উড়োজাহাজের টিকিটের ওপর আবগারি শুল্ক বাড়ানোর ফলে আকাশপথে যাত্রার খরচ বৃদ্ধি পাবে।

মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেট সেবার ক্ষেত্রেও ব্যয় বাড়বে। মোবাইল ফোন ব্যবহারের ওপর সম্পূরক শুল্ক ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৩ শতাংশ করা হয়েছে। ফলে এখন থেকে মোবাইল ফোন ব্যবহারে সম্পূরক শুল্ক, ভ্যাট এবং সারচার্জ মিলে মোট কর ৩৯ শতাংশের পরিবর্তে ৪২.৪৫ শতাংশ দিতে হবে।

এনবিআর জানায়, এসব পদক্ষেপ রাজস্ব সংগ্রহ বাড়ানোর জন্য নেওয়া হলেও এর প্রভাব সরাসরি ভোক্তাদের ওপর পড়বে, যা জনমনে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।

ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের ওপর ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করায় ইন্টারনেট বিল বাড়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। এ বিষয়ে ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (আইএসপিএবি) সভাপতি এমদাদুল হক বলেছেন, “এ সিদ্ধান্তের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে আমাদের টিকে থাকা কঠিন হয়ে পড়বে। এর ফলে আইএসপি সেবার মান আরও খারাপ হবে।”

তিনি আরও বলেন, “সরকারকে এ সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানাই। কারণ, এতে শুধু ব্যবসার ক্ষতি হবে না, বরং সেবার মান কমে যাবে এবং গ্রাহকদের খরচও বাড়বে।”

কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এস এম নাজের হোসেন এই সিদ্ধান্তকে “নজিরবিহীন” বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, “অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে ভ্যাট ও শুল্ক বাড়ানোর এমন পদক্ষেপ এর আগে দেখা যায়নি। অন্তর্বর্তী সরকার দাবি করলেও এই বর্ধিত ভ্যাট ও শুল্কের প্রভাব সরাসরি ভোক্তাদের ওপরই পড়বে।”

তিনি আরও বলেন, “মানুষ এমনিতেই উচ্চ মূল্যস্ফীতির চাপে পিষ্ট। এ ধরনের পদক্ষেপ তাদের জীবনযাত্রার খরচ আরও বাড়াবে। সরকারের উচিত কর ফাঁকি রোধে কঠোর মনোযোগ দেওয়া। কর ফাঁকি বন্ধ করা গেলে এ ধরনের পদক্ষেপ প্রয়োজন হতো না এবং জনগণের কষ্টও লাঘব হতো।”

প্রসঙ্গত, জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সামগ্রিক রাজস্ব আদায় ২ দশমিক ৬২ শতাংশ কমে যাওয়ার প্রেক্ষাপটে এনবিআর পরোক্ষ কর বাড়ানোর পদক্ষেপ নিয়েছে। পাশাপাশি, দেশীয় ও বিদেশি উৎস থেকে সরকারের ঋণ নেওয়ার চাপও বৃদ্ধি পেয়েছে।

এ ছাড়া আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) অনুমোদিত ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের ঋণের শর্তের অংশ হিসেবেও ভ্যাট বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছিল। ২০০৩ সালের জানুয়ারিতে আইএমএফ এই ঋণ অনুমোদন দেয়।

এই সিদ্ধান্তের ফলে ভোক্তারা আরও বেশি আর্থিক চাপে পড়বেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।