ইফতারি উপকরণ হিসেবে জনপ্রিয় বেগুন ও শসার দাম দ্বিগুণ

অনলাইন ডেক্স: পবিত্র রমজান মাস ঘিরে দেশে বিপুল পরিমাণ ভোগ্যপণ্য আমদানি করা হয়েছে। এতে রোজার নিত্যপণ্য হিসেবে পরিচিত ছোলা, খেজুর, ডাল, পেঁয়াজ, রসুন এবং চিনির বাজার এখন স্থিতিশীল রয়েছে। তবে, গত নভেম্বর থেকে দেশে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট চলমান। হাতে গোনা কয়েকটি দোকানে বোতলজাত তেল পাওয়া গেলেও তা সরকারের নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি মূল্যে বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়া, বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ সংকটের কারণে খোলা সয়াবিন তেলের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ভোক্তাদের উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা আশঙ্কা করছেন যে, এই সংকট রমজান মাসে ভোক্তাদের জন্য বাড়তি চিন্তার কারণ হতে পারে।

ইফতারির জনপ্রিয় পণ্য বেগুন, শসা ও লেবুর চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় সেগুলোর দামও দ্বিগুণ হয়ে গেছে। রাজধানীর মগবাজার, মহাখালী কাঁচাবাজার, বাড্ডা, রামপুরা ও জোয়ারসাহারা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গতকাল সাপ্তাহিক বন্ধের দিন এবং রমজান উপলক্ষে বাজারে ক্রেতাদের ভিড় বেড়েছে। প্রতিটি নিত্যপণ্যের দোকানের সামনে ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।

ক্রেতারা এই সময়ে দরদাম করে পণ্য কিনছেন, বিশেষ করে মাছ-মাংসের দোকানগুলোতে ভিড় বেশি। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, রমজান শুরু হতে পারে শনিবার (আজ), তাই ভোক্তারা অতিরিক্ত বাজার করছেন। এর ফলে কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে। গত দুই-তিন দিনে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে ব্রয়লার মুরগির দাম, যা এখন ২০০ থেকে ২১০ টাকা প্রতি কেজি, এবং সোনালি মুরগি ৩২০ থেকে ৩৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গরুর মাংস কেজিতে ৩০ থেকে ৫০ টাকা বেড়ে ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকায়, খাসির মাংস ১,২০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। মাছের দামও বেড়েছে, মাছভেদে কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা দাম বেড়েছে।

বেগুনের দাম ৮০ থেকে ১০০ টাকা প্রতি কেজি, শসা ৬০ থেকে ৮০ টাকা কেজি, এবং লেবুর দাম দ্বিগুণ হয়ে ৬০ থেকে ৮০ টাকা হালি হয়ে গেছে। বিশেষ করে লেবুর দাম সবচেয়ে বেশি বেড়েছে, কিছু উন্নত জাতের লেবুর দাম এখন ১০০ টাকা হালি। বাড্ডার সবজি বিক্রেতারা জানিয়েছেন, লেবুর অফ সিজন এবং শীতকালীন সবজির সরবরাহ কমে যাওয়ার কারণে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।

দেশে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট এখনও চলছে, তবে সরকার এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় নানা পদক্ষেপ নিয়েছে। বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশির উদ্দিন জানিয়েছেন, আগামী সাত দিনের মধ্যে ভোজ্যতেলের সরবরাহ স্বাভাবিক হবে। তিনি আরও বলেন, খেজুরসহ সব পণ্যের দাম কমে আসবে এবং এবারের রমজানে সরবরাহের কোন সমস্যা হবে না।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান বলেছেন, ভোজ্যতেল নিয়ে যারা কারসাজি করছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি জানান, ভোগ্যপণ্যের বাজার ব্যবস্থাপনায় রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের একটি অংশ এখনও সক্রিয়, এবং যারা ভোক্তার স্বার্থবিরোধী কাজ করছে, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

বাংলাদেশ সরকার রমজান উপলক্ষে ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি এবং দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। এসব পদক্ষেপের ফলে ভোজ্যতেল, ছোলা, চিনি, পেঁয়াজ, আলু, খেজুরসহ বিভিন্ন পণ্যে শুল্কছাড় দেওয়া হয়েছে, যা আমদানিতে উৎসাহ বৃদ্ধি করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এলসি নিষ্পত্তির তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের অক্টোবর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত ১৪ লাখ ৭৫ হাজার ৭১৩ টন ভোগ্যপণ্য আমদানি হয়েছে, যা চলতি অর্থবছরের একই সময়ে ১৯ লাখ ১৯ হাজার ৪৫০ টনে পৌঁছেছে।

এছাড়া, বাজারে অন্যান্য পণ্যের দাম স্থিতিশীল রয়েছে, এবং ক্রেতারা আসন্ন রমজান মাসে বাজারে আর কোনও সমস্যা হবে না বলেই আশা করছেন।