ইরান–ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির পর পড়েছে মার্কিন ডলারের মান

প্রতিবেদক: ইরান–ইসরায়েল যুদ্ধবিরতির পর আন্তর্জাতিক মুদ্রাবাজারে মার্কিন ডলারের মান নাটকীয়ভাবে কমে গেছে। বৃহস্পতিবার ইউরোর বিপরীতে ডলারের দর সাড়ে তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে পৌঁছেছে। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভের স্বাধীনতা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হওয়ায় ডলারের ওপর আস্থা কমেছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।

ডলারের মান শুধু ইউরো নয়, সব প্রধান মুদ্রার বিপরীতেই কমেছে। ইউরোর বিপরীতে ডলারের মান ০.২ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১.১৬৮৭ ডলারে—যা ২০২১ সালের অক্টোবরের পর সর্বোচ্চ। বিশেষজ্ঞদের পূর্বাভাস, ইউরোর মান আরও বেড়ে ১.১৯ ডলার পর্যন্ত যেতে পারে। পাউন্ডের মানও বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১.৩৬৯০ ডলারে—২০২২ সালের জানুয়ারির পর যা সর্বোচ্চ। সুইস ফ্রাঁর বিপরীতে ডলার ০.৮৩৩ হয়েছে, যা ২০১১ সালের পর সর্বনিম্ন। ডলারের বিপরীতে ইয়েনের মান ০.২ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৪৪.৮৯। সব মিলিয়ে ডলার ইনডেক্স ২০২২ সালের শুরুর পর সর্বনিম্ন অবস্থানে, ৯৭.৪৯১ পয়েন্টে নেমে এসেছে।

ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ফেড চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েলকে সরিয়ে অন্য কাউকে বসানোর চিন্তা করছেন। সেপ্টেম্বর বা অক্টোবরের মধ্যেই এ বিষয়ে ঘোষণা আসতে পারে। এই খবরে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। ইনটাচ ক্যাপিটাল মার্কেটসের কিয়ারান উইলিয়ামস বলেন, যদি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আগেভাগে নতুন চেয়ারম্যান মনোনয়ন করা হয়, তাহলে ফেডের স্বাধীনতা প্রশ্নবিদ্ধ হবে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরও দুর্বল হবে।

এরই মধ্যে ট্রাম্প প্রকাশ্যে ফেড চেয়ারম্যান পাওয়েলকে ‘শোচনীয়ভাবে খারাপ’ এবং ‘গড়পড়তা মেধার’ মানুষ হিসেবে মন্তব্য করেছেন। তিনি অভিযোগ করেছেন, পাওয়েল সুদের হার যথাযথভাবে কমাননি। অন্যদিকে ফেড চেয়ারম্যান বলেন, ট্রাম্পের শুল্কনীতি মূল্যস্ফীতির ঝুঁকি বাড়াচ্ছে, তাই এসব বিষয়ে সতর্ক থাকা প্রয়োজন।

মার্কিন সুদের হার কমার সম্ভাবনা বাড়ছে। এক সপ্তাহ আগে যেখানে সুদহার কমার সম্ভাবনা ছিল ১২ শতাংশ, তা বেড়ে এখন ২৫ শতাংশ হয়েছে। বাজার আশা করছে, বছরের শেষে মোট ৬৪ বেসিস পয়েন্ট কমে যেতে পারে, যেখানে আগে ধরা হয়েছিল ৪৬ বেসিস পয়েন্ট।

এই পরিস্থিতিতে ট্রাম্পের আগের ঘোষিত পাল্টা শুল্কনীতি (২ এপ্রিলের) আবার আলোচনায় এসেছে, যা ৯ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত রয়েছে। ওই সময়ের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্র অন্য দেশগুলোর সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি চূড়ান্ত করতে চাইছে।

আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক জেপি মরগান সতর্ক করে বলেছে, শুল্কের প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হ্রাস পাবে এবং মূল্যস্ফীতি বাড়বে, ফলে মন্দার সম্ভাবনা ৪০ শতাংশে পৌঁছে গেছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি যে তুলনামূলকভাবে ভালো করছিল, তার সমাপ্তি এখন সময়ের ব্যাপার মাত্র।

এই অনিশ্চয়তার কারণে ডলার বৈশ্বিক রিজার্ভ মুদ্রা এবং নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে তার গ্রহণযোগ্যতা হারাচ্ছে। ডলারের দরপতনের সুযোগে ইউরো লাভবান হচ্ছে। ইউরোপের প্রতিরক্ষা ও অবকাঠামো খাতে একত্রে বিনিয়োগ বাড়ানোর উদ্যোগ তাদের অর্থনীতিকে আরও মজবুত ভিত্তির ওপর দাঁড় করাবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।