ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের প্রভাবে ডিজেল আমদানিতে অতিরিক্ত খরচ ৬৮ কোটি টাকা

In বন্দর
June 25, 2025

প্রতিবেদক: ১২ জুন গভীর রাতে ইরানে ইসরায়েলের হামলার এক দিন পর, ১৩ জুন মালয়েশিয়া থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে যাত্রা করে একটি ডিজেলবোঝাই জাহাজ। এতে ছিল ৩৪ হাজার ৬১৭ টন পরিশোধিত ডিজেল। ইন্ডিয়ান অয়েল করপোরেশন সরবরাহিত এই ডিজেলভর্তি জাহাজটি ১৮ জুন চট্টগ্রামে পৌঁছে এবং ২২ জুন তেল খালাস করা হয়। যুদ্ধ শুরুর সময়ের তেলবাজারের অস্থিরতার কারণে ওই এক জাহাজের ডিজেল আমদানিতে বাংলাদেশ সরকারের অতিরিক্ত খরচ হয়েছে প্রায় ৬৮ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) বিশ্ববাজারের সিঙ্গাপুরভিত্তিক সংস্থা প্ল্যাটস এর মূল্যসূচক অনুযায়ী জ্বালানি তেল কিনে। প্রতিটি জাহাজে তেল লোড করার সময়ের আগ-পেছনের মোট পাঁচ দিনের গড় দামে তেল কেনা হয়। বিপিসি জানায়, ১৩ জুন ডিজেল লোডের সময় প্ল্যাটস অনুযায়ী প্রতি ব্যারেলের গড় দাম দাঁড়ায় ৮৩ দশমিক ৮৪ ডলার। সে হিসাবে ৩৪ হাজার ৬১৭ টন বা ২ লাখ ৫৭ হাজার ৯৪৯ ব্যারেল ডিজেলের মোট মূল্য দাঁড়ায় ২ কোটি ১৬ লাখ ২৬ হাজার ৪৪৪ মার্কিন ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ২৬৫ কোটি টাকা।

তবে যুদ্ধ শুরুর আগে ডিজেলের দাম ছিল অনেক কম। ২ জুন মালয়েশিয়া থেকে লোড হওয়া বিপিসির সর্বশেষ জাহাজে প্রতি ব্যারেলের গড় দাম ছিল ৭৬ দশমিক ৬৯ ডলার। যদি ১৩ জুনের জাহাজটি সংঘাত শুরুর আগেই লোড হতো, তাহলে খরচ হতো প্রায় ১৯৭ কোটি টাকা। এর মানে, যুদ্ধের কারণে এক জাহাজেই ৬৮ কোটি টাকা বেশি খরচ হয়েছে।

প্ল্যাটসের মূল্যতালিকা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ১১ জুন ডিজেলের দাম ছিল ৭৯ দশমিক ২৪ ডলার। ইসরায়েলের হামলার পরদিন, ১২ জুন তা বেড়ে দাঁড়ায় ৮১ দশমিক ৩৭ ডলারে। পরের দিন, ১৩ জুন দাম আরও বেড়ে হয় ৮৫ ডলার। ১৬ ও ১৭ জুন দাম পৌঁছে যায় ৮৬ ডলারের ঘরে। সর্বোচ্চ বেড়ে ১৯ জুন প্রতি ব্যারেল ডিজেলের দাম হয় ৯৩ দশমিক ৪১ ডলার। ২০ জুনেও তা ছিল ৯৩ দশমিক ১৬ ডলার। তবে এরপর দাম কিছুটা কমে ২৫ জুন এসে নেমেছে ৮২ ডলারে।

তেলের দাম বৃদ্ধির প্রভাব শুধু ডিজেলেই সীমাবদ্ধ নয়। প্ল্যাটসের তথ্য অনুযায়ী, একই সময় জেট ফুয়েলের দাম বেড়েছে ব্যারেলপ্রতি ১১ ডলার, অকটেন ৯ ডলার, ফার্নেস তেল টনপ্রতি ৩৩ ডলার এবং মেরিন ফুয়েল টনপ্রতি ৫১ ডলার। বিপিসির কর্মকর্তারা বলছেন, হরমুজ প্রণালি যদি বন্ধ হয়, তাহলে তেলের দাম আরও বাড়বে এবং ডিজেলের দাম প্রতি ব্যারেলে ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।

বিপিসির পরিচালক এ কে এম আজাদুর রহমান বলেন, “সারা বিশ্বে তেলের দাম বাড়ছে। আমাদেরও বেশি দামে তেল কিনতে হচ্ছে। যুদ্ধ শুরুর আগে প্রতি ব্যারেল ডিজেলের দাম ছিল ৭৬ থেকে ৭৯ ডলার, এখন তা ৮৫–৯৩ ডলার পর্যন্ত উঠে গেছে। সর্বশেষ যে জাহাজটি এসেছে, সেখানে বাড়তি খরচ হয়েছে প্রায় ৬৮ কোটি টাকা।”

বিপিসির চেয়ারম্যান আমিন উল আহসান বলেন, “বিশ্ববাজারে তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমাদের আমদানির খরচও বেড়েছে। আমরা সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখছি এবং বাজার পরিস্থিতি অনুযায়ী নতুন পরিকল্পনা করছি।”

এদিকে দেশের জ্বালানি ব্যবস্থায় ডিজেল সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয় কৃষি, পরিবহন ও শিল্প খাতে। ফলে এর দাম বাড়লে প্রভাব পড়ে পণ্য পরিবহন ও উৎপাদন খরচে, যার প্রভাব পড়ে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয়েও।