
প্রতিবেদক: দেশে ইলিশ শিকারের নিষিদ্ধ সময়সীমা ২২ দিন থেকে কমিয়ে ১৫ দিন করার পরামর্শ দিয়েছে শ্রম সংস্কার কমিশন। প্রতিবছর আশ্বিন মাসের পূর্ণিমাকে কেন্দ্র করে এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়, যা সাধারণত অক্টোবর মাসে পড়ে। যেমন ২০২২ সালে ৭ থেকে ২৮ অক্টোবর, ২০২৩ সালে ১২ অক্টোবর থেকে ২ নভেম্বর এবং ২০২৪ সালে ১৩ অক্টোবর থেকে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর ছিল। এ সময় ইলিশ ধরা, পরিবহন, ক্রয়-বিক্রয়, মজুত ও বিনিময় নিষিদ্ধ থাকে। সরকার এই নিষেধাজ্ঞাকালীন সময় নিবন্ধিত জেলেদের জন্য প্রতি জেলেকে ২৫ কেজি করে চাল প্রদান করে খাদ্যসহায়তা দিয়ে থাকে।
তবে ইলিশের ক্ষেত্রে এটি একমাত্র নিষেধাজ্ঞা নয়। ইলিশের প্রজনন, আহরণ ও সংরক্ষণের পুরো চক্রজুড়ে বিভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন নিষেধাজ্ঞা জারি করে সরকার। মার্চ-এপ্রিল মাসে বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় এলাকায় সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ থাকে, যাতে ইলিশসহ অন্যান্য মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়। মে-জুলাই মাসে ‘জাটকা সংরক্ষণ’ কার্যক্রমের আওতায় বরিশাল, ভোলা, চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, শরীয়তপুরসহ কিছু নির্দিষ্ট জেলায় ইলিশ ধরা সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ করা হয়।
শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে জলদস্যু, বালুদস্যু ও প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত জেলে ও মৎস্যজীবীদের জন্য ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। একই সঙ্গে জলমহাল ইজারা প্রথা বাতিল করে লাইসেন্স বা নিবন্ধন প্রথা চালুর প্রস্তাব এসেছে। এছাড়া, ফিশিং ট্রলার শ্রমিকদের জন্য গেজেট বাস্তবায়ন, নিষিদ্ধকালীন বিকল্প কর্মসংস্থান, রেশনিং এবং সামাজিক সুরক্ষা নিশ্চিত করার কথাও বলা হয়েছে।
প্রতিবেদনে দাদন প্রথা বিলোপে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ, সহজ শর্তে বিনা সুদে ঋণ প্রদান এবং জেলেদের জন্য পরিচয়পত্র ও ট্র্যাকিং-মনিটরিং ব্যবস্থা চালুর সুপারিশ করা হয়েছে। পাশাপাশি মাছ ধরা ঘাটে অবকাঠামো ও বরফকল নির্মাণ, উপকূলীয় জেলেদের জন্য জমি বরাদ্দ এবং অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি শ্রম সংস্কার কমিশন তাদের এই প্রতিবেদন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে জমা দিয়েছে।