
প্রতিবেদক: দেশের একমাত্র সরকারি তেল শোধনাগার ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের (ইআরএল) ক্ষমতা দ্বিগুণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় ইআরএলের দ্বিতীয় ইউনিট স্থাপনের প্রকল্প হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৪২ হাজার কোটি টাকা।
বর্তমানে ইআরএলের বার্ষিক শোধনক্ষমতা ১৫ লাখ টন। নতুন ইউনিট চালু হলে তা বেড়ে ৪৫ লাখ টন হবে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে প্রতিবছর ২০ থেকে ২৪ কোটি ডলার সাশ্রয় সম্ভব হবে, যা দেশের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
বিপিসি ইতোমধ্যে উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব (ডিপিপি) তৈরি করে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। অনুমোদন পেলে দ্রুত আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করা হবে বলে জানিয়েছেন বিপিসির চেয়ারম্যান আমিন উল আহসান। এ প্রকল্পের খরচ সরকার ও বিপিসি যৌথভাবে বহন করবে।
প্রকল্পটি শুরু হয় ২০১২ সালে, তবে দীর্ঘসূত্রতা, ব্যয় বৃদ্ধি ও বিতর্কিত ব্যবসায়ী গোষ্ঠী যুক্ত হওয়াসহ নানা কারণে আলোর মুখ দেখেনি। শুরুতে ব্যয় ধরা হয়েছিল সাড়ে ১৩ হাজার কোটি টাকা, যা পরে বেড়ে দাঁড়ায় ৪২ হাজার কোটি টাকায়।
দেশে প্রতিবছর তেলের চাহিদা ক্রমেই বাড়ছে। ১৯৭৬ সালে যেখানে চাহিদা ছিল ১১ লাখ টন, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে তা দাঁড়িয়েছে ৬৭ লাখ টনে। সদ্য শেষ হওয়া ২০২৪-২৫ অর্থবছরে সরবরাহ হয়েছে প্রায় ৬৮ লাখ টন। বিপিসির হিসাব অনুযায়ী, ২০২৬-২৭ অর্থবছরে এ চাহিদা ৮০ লাখ টন ছাড়াতে পারে।
ডিজেল দেশের সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত জ্বালানি (গড়ে ৪৬ লাখ টন বছরে)। দেশে অপরিশোধিত তেল এনে শোধন করলে প্রতি ব্যারেলে গড়ে ১০–১১ ডলার সাশ্রয় হয়, যা লিটারপ্রতি প্রায় ৮ টাকা ৪৪ পয়সার সমান।
বিপিসির কর্মকর্তারা মনে করছেন, দ্বিতীয় ইউনিট চালু হলে শুধু জ্বালানি খাতে নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে না, বরং কৌশলগত মজুত বাড়বে। এতে আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম বাড়লে তাৎক্ষণিকভাবে উচ্চ মূল্যে আমদানি না করে অপেক্ষা করার সুযোগ পাবে সরকার।
ইআরএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শরীফ হাসনাত বলেন, “দ্বিতীয় ইউনিট চালু হলে দেশের জ্বালানি খাতে নিরাপত্তা নিশ্চিত হবে। পরিশোধন ও মজুত ক্ষমতা বাড়বে। বিনিয়োগ ১০ বছরের মধ্যেই উঠে আসবে।”