
প্রতিবেদক: ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে নতুন টাকার চাহিদা ব্যাপকভাবে বেড়েছে। তবে চাহিদার তুলনায় খুবই কম নতুন টাকা ছাপানোর কারণে বাজারে দেখা দিয়েছে চরম সংকট। ব্যাংকের শাখাগুলোতে এসে নতুন টাকা না পেয়ে অনেক গ্রাহক ফিরে যাচ্ছেন। বাধ্য হয়ে তারা খোলা বাজার থেকে দ্বিগুণ দামে নতুন টাকা কিনছেন।
মঙ্গলবার (৩ জুন) রাজধানীর মতিঝিল, গুলিস্তান, ও পল্টনসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, নতুন টাকার জন্য মানুষের আগ্রহ তুঙ্গে। বিশেষ করে ২০ ও ৫০ টাকার নতুন নোটের চাহিদা সবচেয়ে বেশি। তবে চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ না থাকায় অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করছেন।
রাজধানীর সোনালী ব্যাংক লোকাল অফিসে এসেছিলেন আনিসুর রহমান নামের এক ব্যক্তি। কিন্তু নতুন টাকা না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যেতে হয় তাকে। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ জানায়, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে এখনো তাদের হাতে পর্যাপ্ত নতুন টাকা পৌঁছায়নি। আগের দিন যেটুকু এসেছিল, তা ইতিমধ্যেই শেষ হয়ে গেছে।
আনিসুর রহমান পরে খোলা বাজার থেকে দ্বিগুণ দামে টাকা কিনেছেন। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন,নতুন টাকা শুধু অর্থ নয়—এটি ঈদের স্মৃতি, সংস্কৃতি ও ভালোবাসার প্রতীক। ঈদের সালামি বা উপহার হিসেবে নতুন টাকা দিতে না পারলে মনে শান্তি মেলে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে এবং গুলিস্তান এলাকায় খোলা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ২০ টাকার প্রতিটি নতুন নোট বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়, আর ৫০ টাকার নোট বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়।
অথচ ১০০০ টাকার নতুন নোট মিললেও সেটির চাহিদা তুলনামূলকভাবে কম।
সূত্র জানায়, চলতি বছরে ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে বাংলাদেশ ব্যাংক মাত্র ২০০ কোটি টাকার নতুন নোট ছাপিয়েছে, যেখানে প্রতিবছর ২৫ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকার মতো নতুন টাকার চাহিদা থাকে।
অন্যদিকে, ৫ আগস্টের পর থেকে নতুন করে কোনো টাকা ছাপা হয়নি। পুরোনো ছাপানো টাকা সরবরাহ ব্যবস্থাও ছিল বন্ধ।
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ১ জুন থেকে বাজারে নতুন টাকা সরবরাহ শুরুর কথা থাকলেও ব্যাংকগুলোতে সরবরাহ হয়েছে খুবই অল্প পরিমাণ। ফলে তারা সাধারণ গ্রাহকদের পর্যাপ্ত নতুন টাকা দিতে পারছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, তারা রবিবার থেকে সীমিত পরিসরে ২০, ৫০ ও ১০০০ টাকার নতুন নোট সরবরাহ শুরু করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতিঝিল অফিস থেকে। পাশাপাশি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতেও সরবরাহ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। তবে তা চাহিদার তুলনায় নগণ্য।
নতুন টাকা না পেয়ে অনেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও ক্ষোভ প্রকাশ করছেন। কেউ কেউ বলছেন, “প্রতি বছর নতুন টাকা চাহিদা নিয়ে সমস্যা হয়, অথচ কেন্দ্রীয় ব্যাংক আগেভাগে প্রস্তুতি নেয় না।
নতুন টাকা ঈদের আনন্দে বাড়তি রঙ যোগ করে। তাই এই সংকট শুধু অর্থনৈতিক নয়, এটি মানসিক হতাশারও কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ভবিষ্যতে ঈদ সামনে রেখে সময়মতো ও পর্যাপ্ত নতুন টাকা ছাপানোর উদ্যোগ না নিলে এমন সংকট আরও বাড়বে।