
প্রতিবেদন: ঈদের আগে বিশেষ কাউন্টার খুলে নতুন নোট বিনিময় স্থগিতের সিদ্ধান্তে ব্যাংকগুলো চরম সংকটে পড়েছে। ঢাকার বিভিন্ন ব্যাংকের ৮০টি শাখার ভল্টে বিপুল পরিমাণ নতুন নোট জমা থাকলেও তা কোনো কাজে আসছে না। বাংলাদেশ ব্যাংকও এসব নোট ফেরত নিচ্ছে না, ফলে ব্যাংকের ভল্টে স্থান সংকট তৈরি হয়েছে।
প্রতিটি ব্যাংকের ভল্টের ধারণক্ষমতা সীমিত। সাধারণত, ৫০০ ও ১,০০০ টাকার নোট বেশি রাখা হয়, যা কম জায়গা দখল করে। তবে এবার ঈদের আগে ৫, ২০ ও ৫০ টাকার নতুন নোট বিতরণ করা হবে ধরে নিয়ে ব্যাংকগুলো বড় পরিমাণে এই নোট সংরক্ষণ করেছিল। এখন বিতরণ বন্ধ থাকায় ব্যাংকের ভল্টের জায়গা সংকুচিত হচ্ছে এবং শাখাগুলোর উল্লেখযোগ্য পরিমাণ টাকা আটকে গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতি বছর ঈদের আগে নতুন নোট বিতরণ করে। এবারও ৬৫ লাখ টাকার সমপরিমাণ নতুন নোট নির্ধারিত শাখাগুলোতে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুর ছবি সংবলিত নোট বিতরণ নিয়ে বিতর্কের কারণে গত ১০ মার্চ বিতরণ স্থগিত করা হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান, নতুন নোট পাঠানো এবং ফেরত নেওয়ার জন্য বাড়তি খরচ হয়। তাই নোট বিতরণ স্থগিতের পরপরই তা ফেরত নেওয়া হয়নি। পরবর্তী করণীয় ঠিক না হওয়ায় ব্যাংকগুলো এখন সংকটে পড়েছে।
নতুন নোট বিতরণ বন্ধ থাকায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আর্থিকভাবে দুর্বল ব্যাংকগুলো। এসব ব্যাংকের কয়েকটি শাখা গ্রাহকের টাকা ফেরত দিতেও হিমশিম খাচ্ছে।
জনতা ব্যাংকের পাঁচটি শাখা।এক্সিম ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংকের তিনটি করে শাখা।ন্যাশনাল ব্যাংকের উত্তরা ও গাজীপুরের শ্রীনগর শাখা।এবি ব্যাংকের প্রগতি সরণি শাখা
এগুলোই সবচেয়ে বেশি সংকটে আছে। প্রতিটি শাখায় ৬৫ লাখ টাকা জমা থাকলেও তা ব্যবহার করতে পারছে না।
অনেকেই প্রশ্ন তুলছেন, সরকার পরিবর্তনের আট মাস পরও নতুন ডিজাইনের নোট কেন বাজারে আসেনি? বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, নতুন ডিজাইনের নোট ছাপতে সাধারণত ১২-১৮ মাস সময় লাগে।
১৬ বছর ধরে ছাপানো সব নোটেই বঙ্গবন্ধুর ছবি রয়েছে।আগের কাগজ ও কালি মজুদ থাকায় দ্রুত পরিবর্তন সম্ভব হয়নি।নতুন ডিজাইনের নোটের প্রিন্টিং প্লেট তৈরি হয়েছে, কাগজ-কালি কেনার প্রক্রিয়াও প্রায় শেষ।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আগামী এপ্রিলের শেষ বা মে মাসের প্রথম দিকে নতুন ডিজাইনের নোট বাজারে আসতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, দেশের মোট সঞ্চয়ের পরিমাণ প্রায় ২০ লাখ কোটি টাকা হলেও ছাপানো নোটের পরিমাণ সাড়ে ৩ লাখ কোটি টাকা।
সাধারণ সময়ে মানুষের হাতে থাকে ২.৬ থেকে ২.৯ লাখ কোটি টাকা।ঈদের সময় তা বেড়ে হয় ৩.১০ লাখ কোটি টাকা।
প্রতি বছর ঈদের আগে নতুন নোটের চাহিদা বাড়ে, তাই এবার বিতরণ বন্ধ থাকায় সাধারণ মানুষকেও সমস্যায় পড়তে হতে পারে।
বর্তমানে ব্যাংকগুলো চরম অস্থিরতার মধ্যে রয়েছে। নতুন নোট বিতরণ পুনরায় চালু না হলে, বিশেষ করে ঈদের পর টাকা ফেরত আসার সময় শাখাগুলোতে চরম চাপ তৈরি হবে। ব্যাংকারদের মতে, বাংলাদেশ ব্যাংক দ্রুত সিদ্ধান্ত না নিলে এই পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠবে।