
প্রতিবেদক: ঈদকে কেন্দ্র করে দেশজুড়ে পোশাক বেচাকেনা এখন তুঙ্গে। দেশীয় ব্র্যান্ডগুলোর প্রাধান্য থাকলেও ভারত ও পাকিস্তানের পোশাকের প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ বরাবরই বেশি। ফলে ঈদের আগে প্রতিবছর এসব দেশ থেকে তৈরি পোশাকের আমদানি বেড়ে যায়।
বৈধপথে ভারত ও পাকিস্তান থেকে পোশাক আমদানি হয় বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। এছাড়া, রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাক খাতের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নমুনা হিসেবে কিছু পোশাক আমদানি করে। তবে বাজারে যে পরিমাণ ভারতীয় ও পাকিস্তানি পোশাক বিক্রি হয়, তার তুলনায় বৈধ আমদানি অনেক কম। বিশেষ করে ভারত থেকে বিপুল পরিমাণ পোশাক অবৈধপথে আসে, আর পাকিস্তান থেকে মূলত লাগেজের মাধ্যমে পোশাক নিয়ে আসা হয়।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) জানায়, গত তিন মাসে (ডিসেম্বর–ফেব্রুয়ারি) ভারত ও পাকিস্তান থেকে ২২ লাখ ৩৫ হাজার পিস পোশাক বৈধভাবে আমদানি হয়েছে। গত বছর একই সময়ে এ সংখ্যা ছিল ২৬ লাখ পিস।
গত তিন মাসে ভারত থেকে ১৩ লাখ ২৯ হাজার পিস পোশাক আমদানি হয়েছে, যার শুল্কায়িত মূল্য ৪৫ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এটি প্রায় সাড়ে চার লাখ পিস কম।
এবছর আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৫৭ হাজার পিস, যা গতবারের তুলনায় কম (১ লাখ ৮৮ হাজার পিস।প্রতি পিসের গড় আমদানি মূল্য ৩৭৭ টাকা, শুল্ক-করসহ মোট মূল্য ১,১০৫ টাকা।
উন্নত মানের থ্রি-পিসের আমদানি মূল্য ৩,৩৮৯ টাকা, আর সাধারণ মানেরটির ৭৩১ টাকা।এবছর আমদানি হয়েছে ৫ হাজার ২৯৭ পিস, যা গতবারের তুলনায় কম।
গড় আমদানি মূল্য ১৭ ডলার, শুল্ক-করসহ প্রতিটি লেহেঙ্গার খরচ দাঁড়িয়েছে ৬,৪০৬ টাকা।আমদানি বেড়েছে, এবার এসেছে ১ লাখ ২৮ হাজার পিস, যা গতবার ছিল ১ লাখ ১৮ হাজার পিস।
পাঞ্জাবি আমদানি তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে।মেয়েদের পোশাক আমদানি হয়েছে ১ লাখ ৫১ হাজার পিস।শিশুদের পোশাক আমদানি হয়েছে ৪ লাখ ৬১ হাজার পিস।
ঈদ বাজারে দেশীয় পোশাকের অবস্থান শক্ত হলেও ভারত ও পাকিস্তানের পোশাকের প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ এখনো বেশ উঁচুতে। বৈধ-অবৈধ উভয় পথেই এসব পোশাকের প্রবাহ চলমান থাকায় বাজারে বিদেশি পোশাকের প্রভাব স্পষ্ট।
ঈদকে সামনে রেখে পাকিস্তান থেকে পোশাক আমদানি বেড়েছে। গত তিন মাসে (ডিসেম্বর–ফেব্রুয়ারি) দেশটি থেকে প্রায় ৯ লাখ পিস পোশাক আমদানি হয়েছে, যার শুল্কায়িত মূল্য ৫২ কোটি টাকা। গত বছরের একই সময়ের তুলনায় আমদানি বেড়েছে ৯২ হাজার পিস।
পাকিস্তান থেকে আমদানি হওয়া পোশাকের ৯৭ শতাংশই মেয়েদের পোশাক, যার মধ্যে রয়েছে থ্রি-পিস, টু-পিস ও ওয়ান-পিস।থ্রি-পিস ৭ লাখ ৩৫ হাজার পিস।টু-পিস ও ওয়ান-পিস ১ লাখ ৪৭ হাজার পিস ।
ব্যবসায়ীরা থ্রি-পিসের মূল্য ১ থেকে ১০ ডলার ঘোষণা করলেও কাস্টমস এই দরকে অবিশ্বাস্য মনে করছে। ফলে তারা শুল্কায়নে তিন থেকে চার গুণ বেশি দর নির্ধারণ করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ১ ডলারের পোশাকের শুল্কায়ন করা হয়েছে ৪ ডলারে, যার ফলে প্রতি পিস থ্রি-পিসের শুল্ক-কর নির্ধারণ করা হয়েছে ৬৩১ টাকা।
পাকিস্তান থেকে ছেলেদের পোশাক হিসাবে ৪ হাজার ১৩৯ পিস পাঞ্জাবি আমদানি হয়েছে, যার মূল্য ৩ থেকে ১০ ডলার।
পাকিস্তান থেকে তৈরি পোশাকের পাশাপাশি কিছু কাপড়ও আমদানি হচ্ছে, যা মূলত পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়ে আসছে। বাণিজ্যিকভাবে কিছু কাপড় আমদানি হলেও পরিমাণ তুলনামূলকভাবে কম। ব্যবসায়ীরা জানান, বৈধপথের পাশাপাশি অবৈধভাবেও পাকিস্তান থেকে পোশাক আসছে।
বাংলাদেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারক দেশ। এখানকার পোশাক ইউরোপ-আমেরিকার নামীদামি ব্র্যান্ডগুলোতে বিক্রি হচ্ছে এবং দেশেও অনেক বড় ব্র্যান্ড গড়ে উঠেছে। দেশীয় শিল্পকে সুরক্ষা দিতে পোশাক আমদানিতে উচ্চ শুল্ক-কর আরোপ করা হয়েছে। তবে অবৈধভাবে আসা পোশাকে এই কর দিতে হয় না, যা দেশীয় ব্যবসায়ীদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ট্যারিফ কমিশন ১০ মার্চ এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, ভারত থেকে শুল্ক ফাঁকি ও চোরাচালানের মাধ্যমে শাড়ি, টু-পিস, থ্রি-পিস, লেহেঙ্গা, জামদানি ও তাঁত শাড়ি দেশে আসছে।
এজন্য সংস্থাটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতা বাড়ানো এবং তৈরি পোশাক আমদানির চালান শতভাগ পরীক্ষা করার সুপারিশ করেছে, যাতে চোরাচালান প্রতিরোধ করা যায়।
ফ্যাশন ব্র্যান্ড ‘রঙ বাংলাদেশ’-এর স্বত্বাধিকারী সৌমিক দাশ বলেন—রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে পার্শ্ববর্তী দেশ ভিসা দেওয়ার ক্ষেত্রে কড়াকড়ি আরোপ করেছে। আমরা ভেবেছিলাম, এতে দেশীয় পোশাকের ব্যবসা ভালো হবে। কিন্তু দেখা গেল, ভারত ও পাকিস্তানের পোশাকের অভাব নেই বাজারে। পাকিস্তানি পোশাক আমদানি অনেক বেড়েছে, যা দেশীয় ব্যবসায়ীদের জন্য ক্ষতির কারণ।’
তিনি আরও বলেন—ব্যবসার খরচ দিন দিন বাড়ছে। এ বছর নতুন করে ভ্যাট আড়াই শতাংশীয় পয়েন্ট বৃদ্ধি পেয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশীয় উদ্যোক্তাদের সুরক্ষা দিতে ভারত ও পাকিস্তান থেকে অবৈধভাবে পোশাক আসা বন্ধ করতে হবে। এতে সরকারও বেশি রাজস্ব পাবে।’
পাকিস্তান ও ভারত থেকে বৈধ-অবৈধ দুইভাবেই বিপুল পরিমাণ পোশাক আসছে, যা দেশীয় বাজার ও ব্যবসায়ীদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। চোরাচালান প্রতিরোধ এবং দেশীয় উদ্যোক্তাদের সুরক্ষা দিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজন।