
প্রতিবেদক: ব্যাংকের বাইরে মানুষের হাতে থাকা নগদ টাকার পরিমাণ আবারও বেড়ে গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি বছরের মে মাসে মানুষের হাতে থাকা নগদ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৯৩ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা, যা এপ্রিলের তুলনায় ১৬ হাজার ৪১২ কোটি টাকা বেশি। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে কেনাকাটা, ব্যাংক একীভূতকরণের ঘোষণায় মানুষের অনাস্থা ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রা সরবরাহ বাড়ানোর মতো কয়েকটি কারণে এই নগদ টাকার পরিমাণ বেড়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারিতে নগদ টাকার পরিমাণ কিছুটা কমলেও মার্চে তা বেড়ে যায় এবং এপ্রিল মাসে আবার কমে আসে। মে মাসে আবারও বড় আকারে নগদ টাকা বেড়ে গেছে। এর পাশাপাশি ছাপানো টাকা (রিজার্ভ মানি) এবং বাজারে চলমান টাকার পরিমাণও বাড়তে দেখা গেছে। বিশেষ করে মে মাসে বাজারে ছাপানো টাকার পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ২১ হাজার ১৬০ কোটি টাকা।
ঈদের সময় গবাদিপশু কেনাসহ নানা খাতে নগদ টাকার প্রয়োজনীয়তা বাড়ে। আবার মে মাসে বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষণা দেয়—অর্থিক সংকটে থাকা পাঁচটি শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক একীভূত করে একটি বড় ইসলামি ব্যাংক গঠন করা হবে। এই ঘোষণার পর সংশ্লিষ্ট ব্যাংকগুলো থেকে অনেক আমানতকারী টাকা তুলে নেন, যার ফলে নগদ টাকার পরিমাণ বেড়ে যায়। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিছু ব্যাংককে ঋণ দেওয়ার জন্য নতুন টাকা ছাপায়, যার প্রভাবও বাজারে পড়েছে।
গত বছরের আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের আগপর্যন্ত মানুষের হাতে নগদ টাকার প্রবণতা ছিল ঊর্ধ্বমুখী। কারণ হিসেবে বলা হয়, তৎকালীন সরকারপন্থী ব্যবসায়ী গোষ্ঠী বিশেষ করে এস আলম গ্রুপের নেতৃত্বে কয়েকটি ব্যাংক থেকে অনিয়মের মাধ্যমে বড় অঙ্কের টাকা তুলে নেওয়া হয়েছিল। এই অনিয়মের কারণে বাংলাদেশ ব্যাংক বাধ্য হয়ে টাকা ছাপিয়ে ওইসব ব্যাংককে সহায়তা করে, যা মূল্যস্ফীতিকে আরও তীব্র করে তোলে।
বর্তমানে ব্যাংক খাতের প্রতি জনগণের আস্থাহীনতা, অতীতে সুদহার কম থাকায় আমানতে আগ্রহের অভাব এবং ব্যাংকগুলোর তারল্য সংকটের কারণে পরিস্থিতি আরও জটিল হয়ে উঠেছে। যদিও সম্প্রতি সুদহার বাড়ানো হয়েছে, তবু আমানতের পরিমাণ আশাব্যঞ্জক হারে বাড়েনি। মার্চ থেকে মে পর্যন্ত আমানতের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে—১৮ লাখ ১৮ হাজার কোটি টাকা থেকে ১৮ লাখ ৩২ হাজার কোটিতে দাঁড়িয়েছে।
এ বিষয়ে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জানান, ঈদসহ বিভিন্ন সময় মানুষের নগদ টাকার প্রয়োজন বাড়ে বলেই এমন ওঠানামা ঘটে। তবে আমানতের সুদহার বাড়লেও ব্যাংকগুলোর আমানত কাঙ্ক্ষিত হারে বাড়ছে না। এর ফলে ব্যাংকের হাতে ঋণ দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত তহবিল নেই। সামনে ঋণের চাহিদা বাড়লে সুদহার আরও বাড়বে বলেও তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিক খাতকে স্থিতিশীল রাখার জন্য নানা উদ্যোগ নিচ্ছে, তবে অতীতের অনিয়ম ও লুটপাটের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে সময় লাগবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।