
প্রতিবেদক: যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, আমদানি পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপে দেশটির বাজারে দাম বাড়বে না। তবে বাস্তব চিত্র বলছে ভিন্ন কথা। একসময় স্থিতিশীল থাকা মার্কিন মূল্যস্ফীতি ধীরে ধীরে বাড়ছে, যার অন্যতম কারণ এই উচ্চ শুল্ক।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের সাম্প্রতিক উচ্চ হারে শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্যের দাম বেড়ে যাবে। যদিও ব্যবসায়ীরা প্রাথমিকভাবে কিছু খরচ নিজেরা বহন করেছেন, এখন তারা সেই খরচের একটি বড় অংশ ভোক্তাদের ওপর চাপিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন। এর অর্থ, সাধারণ আমেরিকানদের আরও বেশি দাম দিতে হবে।
মার্কিন বাণিজ্য দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর আমদানি করা শীর্ষ পণ্যের মধ্যে কম্পিউটার অন্যতম। চীন, মেক্সিকো, তাইওয়ান, ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়া এই খাতে শীর্ষ রপ্তানিকারক। চীন থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর ইতোমধ্যেই অন্তত ৩০% শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, এবং চীনের সঙ্গে বাণিজ্যচুক্তি না হলে এই হার আরও বাড়তে পারে।
তাইওয়ান, ভিয়েতনাম ও মালয়েশিয়া থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর শুল্ক আগামী সপ্তাহে দ্বিগুণ হতে পারে। ইতোমধ্যেই ভোক্তা মূল্য সূচক অনুযায়ী, গত জুনে কম্পিউটারের দাম আগের বছরের তুলনায় প্রায় ৫% বেড়েছে।
যদিও ভারত শীর্ষ পাঁচে নেই, তবুও দেশটি যুক্তরাষ্ট্রে ইলেকট্রনিকস পণ্যের বড় সরবরাহকারী। ভারতের পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক ২৫%।
ইয়েল বাজেট ল্যাবের অর্থনীতিবিদদের মতে, এই শুল্ক দীর্ঘমেয়াদে (৩-১০ বছর) কম্পিউটার ও ইলেকট্রনিকস পণ্যের দামে ৭.৭% এবং স্বল্পমেয়াদে (২-৩ বছর) ১৮.২% পর্যন্ত বৃদ্ধি ঘটাতে পারে।
চীন, ভিয়েতনাম, বাংলাদেশ, ভারত ও ইন্দোনেশিয়া যুক্তরাষ্ট্রের পোশাক আমদানির প্রধান উৎস। এসব দেশের ওপর শুল্ক আরোপ পোশাকের দামে সরাসরি প্রভাব ফেলবে। ইয়েল বাজেট ল্যাবের পূর্বাভাস অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে পোশাকের দাম স্বল্পমেয়াদে ৩৭.৫% এবং দীর্ঘমেয়াদে ১৭.৪% পর্যন্ত বাড়তে পারে।
বিশ্বজুড়ে পরিচিত সুইস ঘড়ির দামও বাড়ছে। সুইজারল্যান্ড থেকে আমদানিকৃত ঘড়ির ওপর ৩৯% ‘পারস্পরিক’ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে দেশটি ৪০০ কোটি ডলারের বেশি মূল্যের ঘড়ি সরবরাহ করেছে। এই খাতে দাম স্বল্পমেয়াদে ৩৯.৭% এবং দীর্ঘমেয়াদে ১৮.৯% পর্যন্ত বাড়তে পারে।
চীন, ভিয়েতনাম ও ইন্দোনেশিয়া যুক্তরাষ্ট্রে জুতার প্রধান সরবরাহকারী। এই তিন দেশের জুতার ওপর শিগগিরই ন্যূনতম ১৯% শুল্ক কার্যকর হচ্ছে, ফলে নিশ্চিতভাবে জুতার দাম বাড়বে।
আমদানিকৃত ওয়াইন ও স্পিরিট থেকে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালকোহল বাজারের ৩৫% রাজস্ব আসে। ইউরোপীয় ইউনিয়নের হুইস্কি, ওয়াইন ও ভদকার ওপর শুল্ক ১০-১৫% বাড়ানো হচ্ছে, যার প্রভাব বাজারে পড়বে।
ভিয়েতনাম ও চীন যুক্তরাষ্ট্রে আসবাবের প্রধান উৎস। খেলনার ক্ষেত্রেও চীন ও ভিয়েতনাম শীর্ষে। চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধির ফলে খেলনার দাম বাড়বে বলে ব্র্যান্ডগুলো ইতোমধ্যেই সতর্ক করেছে। ভিয়েতনামি খেলনার ওপরও বাড়তি শুল্ক দাম বাড়াতে পারে।
এখন পর্যন্ত অনেক ব্যবসায়ী শুল্কের পুরো বোঝা ভোক্তাদের ওপর চাপাননি। অনেকে উচ্চ শুল্কের শঙ্কায় আগে থেকেই পণ্য মজুত করেছিলেন। গোল্ডম্যান স্যাক্সের অর্থনীতিবিদদের মতে, এই শুল্কের পূর্ণ প্রভাব ভোক্তাদামে পড়তে প্রায় আট মাস সময় লাগবে। অর্থাৎ, এর প্রভাব এখন ধীরে ধীরে বাজারে প্রতিফলিত হচ্ছে।