
অনলাইন ডেক্স:উড়োজাহাজ টিকিটে আবগারি শুল্ক বৃদ্ধির সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট খাতের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মন্তব্য করেছেন এ খাতের শীর্ষ কর্মকর্তারা। তাদের মতে, শুল্ক বাড়ানোর ফলে টিকিটের দাম বেড়ে যাবে, যা সরাসরি যাত্রীদের সংখ্যা কমিয়ে দেবে এবং এ খাতের টিকে থাকা আরও কঠিন হয়ে উঠবে।
গত বৃহস্পতিবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটের টিকিটে আবগারি শুল্ক ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৭০০ টাকা করেছে।
- সার্কভুক্ত দেশগুলো: শুল্ক ৫০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ১,০০০ টাকা।
- এশিয়ার অন্যান্য দেশ: শুল্ক ২,০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২,৫০০ টাকা।
- ইউরোপ ও আমেরিকা: শুল্ক ৩,০০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৪,০০০ টাকা।
এনবিআরের এক শীর্ষ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এই শুল্ক বৃদ্ধির মাধ্যমে সরকার অতিরিক্ত ১,০০০ কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য নিয়েছে।
নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, “শুল্ক বৃদ্ধির ফলে আমাদের খরচ বাড়বে এবং তা টিকিটের দামে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। উড়োজাহাজ ভাড়া ৫০০ থেকে ১,০০০ টাকা বাড়লে যাত্রীদের চাহিদা প্রায় ২৫ শতাংশ কমে যায়।
তিনি আরও বলেন, শুল্ক বৃদ্ধির ফলে রাজস্ব আদায়ের যে আশা সরকার করছে, তা পুরোপুরি সফল নাও হতে পারে। কারণ, যাত্রীসংখ্যা কমে যাওয়ায় পরোক্ষভাবে সরকারের রাজস্ব ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মফিজুর রহমান উদাহরণ দিয়ে বলেন, যদি এক মাসে তিন লাখ যাত্রী যাওয়া-আসা করেন, তবে শুল্ক বৃদ্ধির কারণে যাত্রীসংখ্যা ২৫ শতাংশ কমে গেলে প্রায় ৭৫,০০০ যাত্রী হারাতে হবে। এতে রাজস্ব আয় বৃদ্ধির বদলে ক্ষতির মুখোমুখি হতে পারে এ খাত।
শুল্ক বৃদ্ধির ফলে টিকিটের দাম বাড়ার পাশাপাশি উড়োজাহাজ ভ্রমণের চাহিদা কমে যাওয়ার যে শঙ্কা তৈরি হয়েছে, তা উড়োজাহাজ চলাচল প্রতিষ্ঠানগুলোর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা মনে করেন, সরকারের এ বিষয়ে আরও চিন্তাভাবনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া প্রয়োজন, যাতে রাজস্ব আয় এবং খাতের টেকসই উন্নয়ন উভয়ই নিশ্চিত করা যায়।
উড়োজাহাজ টিকিটে আবগারি শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্তকে দেশের এভিয়েশন খাতের জন্য নেতিবাচক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। তারা বলছেন, এই শুল্ক বৃদ্ধির ফলে যাত্রীদের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি হবে, যা যাত্রীসংখ্যা হ্রাস এবং সরকারের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে।
বর্তমানে অভ্যন্তরীণ রুটের এক যাত্রীকে ১,১২৫ টাকা পর্যন্ত শুল্ক ও অন্যান্য ফি পরিশোধ করতে হয়। এর মধ্যে ৫০০ টাকা আবগারি শুল্ক, ২০০ টাকা ভ্রমণ কর, বিমানবন্দর উন্নয়নে ১০০ টাকা, যাত্রী নিরাপত্তায় ৭০ টাকা এবং অন্যান্য ফি অন্তর্ভুক্ত। আগে আবগারি শুল্ক ৫০০ টাকা থাকলেও সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে তা ৭০০ টাকায় উন্নীত করা হয়েছে।
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইনসের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) কামরুল ইসলাম বলেন, “জাতীয় বাজেটের সময় কর বৃদ্ধি নিয়ে আলোচনা হলেও, এই সিদ্ধান্ত হঠাৎ করেই এসেছে। এর ফলে যাত্রী সংখ্যা হ্রাস পাবে এবং সরকারের উচিত ছিল বিষয়টি আরও গভীরভাবে বিবেচনা করা।”
নভোএয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মফিজুর রহমান বলেন, “বর্তমান শুল্ক হারে সরকার আরও বেশি রাজস্ব আদায় করতে পারত। শুল্ক বৃদ্ধির ফলে যাত্রীসংখ্যা কমায় তা উল্টো ফল দেবে। সরকারের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর মিলিয়ে উড়োজাহাজ ভাড়ার ওপর প্রায় ৪৮ শতাংশ খরচ চাপানো হয়। এই বাড়তি শুল্ক যাত্রীদের ওপর অতিরিক্ত আর্থিক চাপ সৃষ্টি করছে।
তিনি আরও বলেন, “উড়োজাহাজ ভাড়া মাত্র ৫০০-১,০০০ টাকা বাড়লেও চাহিদা প্রায় ২৫ শতাংশ কমে যায়। ফলে শুল্ক বাড়িয়ে রাজস্ব বৃদ্ধির যে লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে, তা অর্জন করা সম্ভব হবে না। বরং এতে এভিয়েশন খাতের প্রবৃদ্ধি বাধাগ্রস্ত হবে।
এয়ার অ্যাস্ট্রার প্রধান নির্বাহী ইমরান আসিফ বলেন, “শুল্ক ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা এভিয়েশন খাতের জন্য বড় চাপ। বিদেশি এয়ারলাইনসগুলোর কস্ট অ্যাডভান্টেজ থাকায় তারা প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকবে। এর ফলে আন্তর্জাতিক রুটে পরিচালিত বা নতুন রুটে পরিকল্পিত কার্যক্রম চালাতে দেশীয় এয়ারলাইনসগুলো সংকটে পড়বে।”
তার মতে, উড়োজাহাজ ভ্রমণকারীদের বড় অংশ অভিবাসী শ্রমিক। তারা সাধারণত এজেন্সির মাধ্যমে টিকিট কেনেন, এবং এই অতিরিক্ত শুল্ক তাদের আর্থিক সক্ষমতার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
কামরুল ইসলাম বলেন, “যাত্রী সংখ্যা বাড়াতে সরকারকে উড়োজাহাজ পরিবহন প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভর্তুকি দেওয়া অথবা অন্যান্য সারচার্জ কমানোর উদ্যোগ নিতে হবে। এর ফলে জিডিপিতে এভিয়েশন খাতের অবদান বাড়বে।”
বর্তমানে জিডিপিতে এভিয়েশন খাতের অবদান মাত্র ৩ শতাংশ। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, শুল্ক বৃদ্ধি এ খাতের প্রবৃদ্ধি হ্রাস করে পর্যটন শিল্পসহ অন্যান্য সংশ্লিষ্ট খাতকেও ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
উড়োজাহাজ টিকিটে শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানাচ্ছেন এ খাতের কর্মকর্তারা। তাদের মতে, যাত্রী সংখ্যা ও সরকারের রাজস্ব বৃদ্ধি নিশ্চিত করতে এই ধরনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের আগে এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব নিয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন।