উত্তরাঞ্চলের কৃষকরা আলুর দাম নিয়ে বিপাকে

অনলাইন ডেক্স: উত্তরাঞ্চলের কৃষকরা এ বছর আলুর উৎপাদন খরচ না ওঠায় চরম ক্ষতির মুখে পড়েছেন। কৃষকদের দাবি, বীজ, সার, কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরি বৃদ্ধির ফলে প্রতি কেজি আলু উৎপাদনে খরচ হয়েছে ১৫-১৬ টাকা। অথচ বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি করতে হয়েছে মাত্র ১৩-১৪ টাকা দরে।

শুধু উৎপাদন খরচই নয়, কোল্ড স্টোরেজ ভাড়া বৃদ্ধি কৃষকদের আরও চাপে ফেলেছে। সরকার প্রতি কেজি আলুর সংরক্ষণে ভাড়া ৬.৭৫ টাকা নির্ধারণ করলেও, অনেক স্টোরেজ মালিক ৮ টাকা পর্যন্ত ভাড়া আদায় করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ বছর রংপুর অঞ্চলের পাঁচ জেলা—লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম, রংপুর, গাইবান্ধা ও নীলফামারীতে এক লাখ ১৯ হাজার ৬৪৯ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে। এতে মোট ২৬ লাখ ৯৯ হাজার ১৯৭ মেট্রিক টন আলু উৎপাদিত হয়েছে, যা গত বছরের তুলনায় ১৯ হাজার ৪৭ হেক্টর বেশি।

এই অঞ্চলে ৭১টি কোল্ড স্টোরেজ রয়েছে, যেখানে সর্বমোট ৭ লাখ ৩২ হাজার ৫৭২ মেট্রিক টন আলু সংরক্ষণ করা যায়।

কোল্ড স্টোরেজ ভাড়া নিয়ে কৃষকদের অভিযোগ

লালমনিরহাটের তিস্তা হিমাগারের ব্যবস্থাপক রবিউল ইসলাম জানান, সরকারিভাবে প্রতি কেজি আলুর সংরক্ষণ ভাড়া ৬.৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হলেও মালিকপক্ষ ৮ টাকা দাবি করছে। লালমনিরহাট কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোকছেদুর রহমান জানান, শ্রমিকের মজুরি ও বিদ্যুৎ খরচ বৃদ্ধির কারণে কোল্ড স্টোরেজ মালিকরা লোকসানে পড়ছেন, তাই তারা ভাড়া ৭ টাকা করার দাবি জানিয়েছেন।

লালমনিরহাট সদর উপজেলার আক্কাস আলী জানান,এ বছর এক বিঘা জমিতে আলু চাষে খরচ হয়েছে ৪৩-৪৫ হাজার টাকা, যা গত বছর ছিল ৩৫-৩৬ হাজার টাকা।প্রতি বিঘা জমিতে ৭০-৮০ মণ (প্রতি মণ ৪০ কেজি) আলু উৎপাদন হয়েছে।তিনি ৮ বিঘা জমিতে ৬০০ মণ আলু পেয়েছেন, যার মধ্যে ২০০ মণ ১৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন।

লালমনিরহাটের আব্দুল জব্বার অভিযোগ করেন,গত বছর প্রতি কেজি আলু সংরক্ষণে ৫ টাকা খরচ হলেও এ বছর সরকারিভাবে ৬.৭৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।কিন্তু কোল্ড স্টোরেজ মালিকরা ৮ টাকা পর্যন্ত ভাড়া আদায় করছেন, যা কৃষকদের জন্য আরও বড় বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রংপুরের অরুণ চন্দ্র সেন বলেন,গত বছর বাজারে আলুর দাম বেশি থাকায় এবার বেশি জমিতে চাষ করেছেন।কিন্তু বাজারে দাম কমে যাওয়ায় অধিকাংশ কৃষক হতাশ।মাত্র ১৫-২০% আলু কোল্ড স্টোরেজে সংরক্ষণ করা সম্ভব, বাকিটা কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন।

রংপুর আঞ্চলিক কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক শফিকুল ইসলাম জানান,কোল্ড স্টোরেজের ভাড়া সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি নেওয়া হলে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় আলুর ফলন ভালো হলেও, সার, বীজ, কীটনাশক ও শ্রমিকের মজুরি বেড়ে যাওয়ায় কৃষকরা ক্ষতির মুখে পড়েছেন।

উত্তরাঞ্চলের কৃষকরা বাজারদর কম ও সংরক্ষণ ব্যয় বৃদ্ধির কারণে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছেন। সরকারের কঠোর মনিটরিং না থাকলে কোল্ড স্টোরেজের ভাড়া বাড়তি নেওয়ার প্রবণতা চলতে থাকবে, যা কৃষকদের দুর্দশা আরও বাড়াবে। কৃষকদের স্বার্থ রক্ষায় সরকারি সহায়তা ও বাজার মূল্য নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।