
প্রতিবেদক: যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ঋণমান নির্ধারক সংস্থা ফিচ রেটিংস-এর কাছে বাংলাদেশের সার্বিক আর্থিক পরিস্থিতি তুলে ধরেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংক দাবি করেছে, দেশের ডলারের বিনিময় হার ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। একইসঙ্গে বাংলাদেশের ঋণমান পুনর্বিবেচনার আহ্বানও জানানো হয়েছে সংস্থাটিকে।
সোমবার (২৮ এপ্রিল) বাংলাদেশ ব্যাংক ও ফিচ রেটিংস-এর মধ্যে এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর জাকির হোসেন চৌধুরী, নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান এবং অন্যান্য কর্মকর্তারা। এর আগে এসঅ্যান্ডপি-র সঙ্গেও একই ধরনের বৈঠক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান জানান, রেটিং এজেন্সিগুলোর সামনে দেশের বাস্তব আর্থিক চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। বিভিন্ন অর্থনৈতিক সূচকের অগ্রগতি রেটিং সংস্থাগুলোর কাছে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেয়েছে। তাই ঋণমান পুনর্বিবেচনার জন্য অনুরোধ জানানো হয়েছে।
তিনি বলেন, “রেটিং সংস্থাগুলো জানতে চেয়েছে— মার্চে রেকর্ড ৩ বিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স আসার পরও কেন রিজার্ভ বাড়ছে না। জবাবে আমরা জানিয়েছি, আগের সরকারের নেওয়া বৈদেশিক ঋণ এবং তার বকেয়া কিস্তি পরিশোধ করতেই রিজার্ভের ওপর চাপ তৈরি হয়েছে। তবুও বর্তমান পরিস্থিতি স্বাভাবিক। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, নোকিয়ার ঋণ পরিশোধ করতে না হলে রিজার্ভ আরও ভালো থাকত।
আরিফ হোসেন আরও বলেন, “বাংলাদেশ ২০২৬ সালের নভেম্বরে জাতিসংঘের এলডিসি তালিকা থেকে বের হয়ে যাবে। তখন বৈদেশিক সহায়তা পাওয়া কঠিন হবে। তাই এখন থেকেই রেটিং যথাযথভাবে মূল্যায়ন করাটা জরুরি।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের মে মাসে ফিচ রেটিংস দ্বিতীয়বারের মতো বাংলাদেশের ঋণমান কমায় এবং ‘বিবি মাইনাস’ থেকে নামিয়ে ‘বি প্লাস’ করে। একই বছরের জুলাইয়ে এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল-ও একই পদক্ষেপ নেয়। যদিও তারা দেশের অর্থনৈতিক পূর্বাভাস স্থিতিশীল রেখেছে।
মুখপাত্র আরও জানান, নতুন টাকা, মূল্যস্ফীতি এবং ব্যাংক খাতের দুর্বলতা সম্পর্কেও রেটিং এজেন্সিগুলোর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ও গভর্নর দায়িত্ব নেওয়ার পর এখন পর্যন্ত কোনো নতুন নোট ছাপানো হয়নি। একটি নোট ছাপাতে ন্যূনতম ১৮ মাস সময় লাগে। বর্তমানে একসঙ্গে ৯ ধরনের নোট ছাপানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে এবং মে মাসেই বাজারে নতুন নোট আসবে।
দুর্বল ব্যাংকগুলোর অনিয়মের কারণেই তারল্য–সংকট হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “এই ব্যাংকগুলোর প্রকৃত অবস্থা যাচাই করতে টাস্কফোর্স গঠন করা হয়েছে এবং তাদের সুপারিশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইতিমধ্যে ব্যাংক রেজল্যুশন অ্যাক্ট প্রণয়ন করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, মূল্যস্ফীতি কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় কমানো সম্ভব হয়নি, তবে কিছুটা কমছে। রপ্তানি ও রেমিট্যান্স বৃদ্ধির ফলে ডলারের বিনিময় হার কিছুটা কমেছে, যা ইতিবাচক দিক।