এক দশকে ছড়িয়ে পড়া এজেন্ট ব্যাংকিং সেবার গতি কমছে

প্রতিবেদক: ২০১৪ সালে ব্যাংক এশিয়ার মাধ্যমে সীমিত আকারে চালু হওয়া এজেন্ট ব্যাংকিং সেবা গত এক দশকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছে। বর্তমানে ৩১টি ব্যাংক এই সেবা দিচ্ছে এবং দেশজুড়ে ২১ হাজারের বেশি আউটলেট রয়েছে। মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত এই সেবার আওতায় আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪২ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা, কিন্তু ঋণ বিতরণ হয়েছে মাত্র ১০ হাজার ৪৬৭ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ছয় মাস ধরে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে এজেন্ট ও আউটলেটের সংখ্যা কমছে। ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বরে যেখানে এজেন্ট সংখ্যা ছিল ১৬ হাজার ২৬, ২০২৫ সালের মার্চে তা কমে দাঁড়ায় ১৫ হাজার ৮৩৮-এ। একই সময়ে আউটলেট কমেছে ৪৫০টি।

ব্যাংকাররা বলছেন, আমানতের প্রবৃদ্ধি থাকলেও ঋণ বিতরণে স্থবিরতা এসেছে। মূল কারণ হিসেবে তারা তারল্য সংকট, ব্যাংক ব্যবস্থাপনায় পরিবর্তন ও আর্থিক খাতের অনিশ্চয়তার কথা বলছেন।

মার্চ ২০২৫ পর্যন্ত ডাচ্–বাংলা ব্যাংকের রয়েছে সর্বাধিক ৫,৬২৫টি আউটলেট, এরপর ব্যাংক এশিয়া (৫,০৩৬), ইসলামী ব্যাংক (২,৭৯০), ব্র্যাক ব্যাংক (১,১২৩) ও মধুমতি ব্যাংক (৬৪৫)।

এজেন্ট ব্যাংকিংয়ে ইসলামী ব্যাংক সবচেয়ে বেশি আমানত সংগ্রহ করেছে—১৭,৩৬০ কোটি টাকা। এরপর রয়েছে ডাচ্–বাংলা ব্যাংক (৫,৭৫৭ কোটি), ব্যাংক এশিয়া (৫,৫৬৭ কোটি), আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংক (৩,৩৪৫ কোটি), ব্র্যাক ব্যাংক (২,০৬৩ কোটি) ও ইউসিবি (১,১৮৯ কোটি)।

ব্যাংক এশিয়ার ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহেল আর কে হুসেইনের মতে, গত বছরের আগস্টে রাজনৈতিক পরিবর্তনের প্রভাব এজেন্ট ব্যাংকিংয়েও পড়েছে। এখন এই সেবাকে আরও বিস্তৃত করতে ব্যাংকটি নতুন উদ্যোগ নিচ্ছে। যেমন—সেবায় বিনা খরচে বিমা সুবিধা যোগ করা, কাঁচাবাজার ও ভাসমান বাজারে এজেন্ট নিয়োগ দেওয়া এবং কর্মঘণ্টার বাইরে সেবা পৌঁছানো। ২০২৫ সালে তারা এজেন্ট সংখ্যা ৬ হাজার থেকে ৯ হাজারে উন্নীত করার পরিকল্পনা করেছে।

দ্রুত প্রসারিত হওয়া এজেন্ট ব্যাংকিং বর্তমানে একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে এসে দাঁড়িয়েছে। সেবাটি এখনও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর জন্য কার্যকর হলেও ঋণ বিতরণে গতি না আসলে দীর্ঘমেয়াদে এর প্রভাব সীমিত হয়ে পড়তে পারে। ফলে ব্যাংকগুলোর পক্ষ থেকে সেবার কাঠামো পুনর্বিন্যাস এবং প্রণোদনার ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।