এটিএম বুথে টাকা তোলায় ভোগান্তি, নির্দেশনা মানে না ব্যাংকগুলো

প্রতিবেদক: প্রতিবছরের মতো এবারও ঈদ উপলক্ষে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে একটি নির্দেশনা দেওয়া হয়েছিল, যাতে ব্যাংক ছুটির মধ্যেও এটিএম বুথগুলো সার্বক্ষণিক সচল রাখা হয়, যাতে গ্রাহকেরা নগদ টাকার সংকটে না পড়েন। কিন্তু বাস্তবে অধিকাংশ ব্যাংকই এই নির্দেশনা যথাযথভাবে পালন করেনি। ফলে এবারের ঈদের ছুটির টানা ১০ দিনের মধ্যে এটিএম বুথ থেকে টাকা তুলতে গিয়ে বেশিরভাগ গ্রাহকই ভোগান্তির মুখে পড়েছেন। ব্যাংক খুলবে আগামী রোববার।

এই সময়টায় অনেক ব্যাংক শুধু নিজস্ব গ্রাহকদের জন্য সীমিত পরিসরে টাকা তোলার সুযোগ রেখেছে। আবার কেউ কেউ অন্য ব্যাংকের কার্ড ব্যবহারকারীদের জন্য এটিএম সেবা বন্ধ করে দিয়েছে। এমনকি অনেক ব্যাংক নিজেদের গ্রাহকদের জন্যও টাকা তোলার সীমা কমিয়ে দিয়েছে। ঢাকার শাহবাগ এলাকায় গত মঙ্গলবার রাতে একজন গ্রাহক ঢাকা ব্যাংকের কার্ড দিয়ে একাধিক ব্যাংকের বুথে টাকা তুলতে ব্যর্থ হন। একই চিত্র দেখা গেছে দেশের অন্যান্য স্থানেও।

এই সমস্যা সম্পর্কে জানতে যোগাযোগ করা হয় ডাচ্–বাংলা ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, পূবালী ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংকসহ আরও কিছু ব্যাংকের কর্মকর্তাদের সঙ্গে। তারা জানান, এটিএম বুথ দুটি ভিন্ন ব্যবস্থায় পরিচালিত হয়—একটি হলো ব্যাংক শাখা-সংলগ্ন বুথ, যা সংশ্লিষ্ট শাখা তত্ত্বাবধান করে; অন্যটি হলো স্বতন্ত্র স্থানে থাকা বুথ, যা পরিচালনা করে নিরাপত্তা সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান। ঈদের ছুটিতে অধিকাংশ শাখা বন্ধ থাকায় শাখা-সংলগ্ন বুথগুলোতে টাকা রিফিল করা যায়নি। যদিও কিছু ব্যাংক এটিএম রিফিলের জন্য বিশেষ উদ্যোগ নিয়েছিল।

স্বতন্ত্র এটিএম বুথগুলোতে টাকা রিফিলের দায়িত্ব থাকে বেসরকারি নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর। কিন্তু ঈদে কোরবানির পশু কেনাবেচার কারণে নগদের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সব বুথেই অতিরিক্ত চাপ তৈরি হয়। বিশেষ করে ভুট্টা উৎপাদনকারী জেলাগুলোর এটিএমে চাপ আরও বেশি ছিল, কারণ মাঠ থেকে কম দামে ভুট্টা কিনতে আগ্রহী ছিলেন অনেক মজুতদার। দিনাজপুর, ঠাকুরগাঁও, চুয়াডাঙ্গা, লালমনিরহাট, রংপুর, পঞ্চগড়, নীলফামারী, ঝিনাইদহ, জামালপুর ও গাইবান্ধা ছিল এসব চাপে পড়া জেলার অন্যতম।

ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, তারা প্রযুক্তির মাধ্যমে জানতে পারেন কোন এটিএম চালু আছে, কোনটি বন্ধ। তবে ছুটিতে পর্যাপ্ত জনবল না থাকায় বুথ সচল রাখতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়নি। অনেক ব্যাংক এটিএম সেবা থেকে উল্লেখযোগ্য আয় না পাওয়ায় বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে চলায় তেমন আগ্রহও দেখায়নি। ফলে গ্রাহক হয়রানির শিকার হয়েছেন।

সাধারণভাবে একটি এটিএম বুথে সর্বোচ্চ ৮০ লাখ টাকা রাখা যায়। ঈদের সময় এই টাকা দ্রুত শেষ হয়ে যায়। শহরাঞ্চলের বুথে কাছের শাখা থেকে টাকা সরবরাহ করা সম্ভব হলেও দূরবর্তী বুথগুলোতে তা করা কঠিন হয়ে পড়ে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক তথ্য অনুযায়ী, দেশে বর্তমানে ১২ হাজার ৯৪৬টি এটিএম বুথ এবং ৭ হাজার ১২টি ক্যাশ রিসাইক্লিং মেশিন (সিআরএম) রয়েছে। কিন্তু সংখ্যায় এই বুথ বাড়লেও ছুটির সময়ে সেবা নিশ্চিতে কার্যকর পদক্ষেপ না থাকায় সমস্যার পুনরাবৃত্তি ঘটছে প্রতি ঈদেই।