এডিবি সভায় ডিজিটাল রূপান্তর, জলবায়ু সহনশীলতা ও আঞ্চলিক সংযোগে জোর দিল বাংলাদেশ

প্রতিবেদক: এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ৫৮তম বার্ষিক সভায় বাংলাদেশ দ্রুত পরিবর্তনশীল বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে ডিজিটাল রূপান্তর, জলবায়ু সহনশীলতা বৃদ্ধি এবং আঞ্চলিক সংযোগ জোরদারের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। ইতালির মিলানে অনুষ্ঠিত এ সভায় বাংলাদেশের অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ এ আহ্বান জানান। তিনি বাংলাদেশের প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন, যেখানে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকীসহ অন্যান্য সদস্যরাও উপস্থিত ছিলেন।

সভায় এডিবির প্রেসিডেন্ট মাসাতো কান্দা ও প্রতিনিধিদের উদ্দেশে সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বচ্ছতা, অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি ও টেকসই উন্নয়নের পথে ঐতিহাসিক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। তিনি উল্লেখ করেন, এই সংকটময় সময়ে শুধুমাত্র অর্থায়ন নয়, কাঠামোগত সংস্কার ও দীর্ঘমেয়াদি সহনশীলতা গড়ে তুলতেও এডিবির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

অর্থ উপদেষ্টা চারটি মূল খাতে এডিবির সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানান। প্রথমত, ডিজিটাল অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করতে অবকাঠামো উন্নয়ন, ই-গভর্ন্যান্স এবং ডিজিটাল শিক্ষায় বিনিয়োগ প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত, জলবায়ু কার্যক্রমে নবায়নযোগ্য জ্বালানি, জলবায়ুবান্ধব কৃষি এবং উপকূলীয় সুরক্ষা জোরদার করার কথা বলা হয়। তৃতীয়ত, দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মধ্যে বাণিজ্য, শক্তি এবং পরিষেবা খাতে আন্তসীমান্ত বিনিয়োগ বাড়াতে আঞ্চলিক সংযোগ বাড়ানোর তাগিদ দেওয়া হয়। চতুর্থত, টেকসই অর্থায়ন নিশ্চিত করতে ঋণের স্থায়িত্ব বজায় রেখে উদ্ভাবনী অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও তহবিল সংগ্রহের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।

সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “আজকের সংকটকে ভবিষ্যতের সম্ভাবনায় রূপান্তর করতে হলে প্রয়োজন সাহসী চিন্তাধারা, গভীর অংশীদারি ও সম্মিলিত সংকল্প।” তিনি এবারের সম্মেলনের প্রতিপাদ্য ‘অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়া, আগামীর প্রস্তুতি’–কে সময়োপযোগী ও অনুপ্রেরণাদায়ী হিসেবে উল্লেখ করেন।

সভাকে ঘিরে বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল যুক্তরাজ্যের ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিসের (এফসিডিও) প্রতিনিধিদের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে মিলিত হয়। বৈঠকে জানানো হয়, গত পাঁচ দশকে যুক্তরাজ্য বাংলাদেশকে প্রায় ৩১৯ কোটি মার্কিন ডলার উন্নয়ন সহায়তা দিয়েছে। সাম্প্রতিক বৈশ্বিক আর্থিক চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও যুক্তরাজ্য বাংলাদেশকে জলবায়ু সহনশীলতা, মানবিক সহায়তা ও অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির মতো মূল উন্নয়ন অগ্রাধিকারে সমর্থন অব্যাহত রাখার প্রতিশ্রুতি দেয়।

২০২২ সালের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন কৌশল অনুযায়ী, যুক্তরাজ্য নবায়নযোগ্য জ্বালানি, বাণিজ্য, জলবায়ু অর্থায়ন, এসএমই উন্নয়ন, ডিজিটাল প্রশাসন ও শিক্ষা খাতে সহযোগিতা বাড়াতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে। এর জবাবে বাংলাদেশ পরিবেশবান্ধব বিনিয়োগ, কারিগরি প্রশিক্ষণ, নদী পুনরুদ্ধার, বেসরকারি খাতের বিকাশ, পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা, সাইবার নিরাপত্তা ও যৌথ গবেষণায় সহায়তার আহ্বান জানিয়েছে।