এনআইডি যাচাই সীমিত, অনলাইনে ব্যাংক হিসাব খোলা কার্যত বন্ধ

প্রতিবেদক: জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) তথ্যভান্ডারে নাগরিকদের তথ্য যাচাই সীমিত করে দেওয়ার কারণে দেশের ব্যাংকগুলোতে অনলাইনে তাৎক্ষণিক গ্রাহক হিসাব খোলা কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। এমনকি সনাতন পদ্ধতিতে হিসাব খোলার ক্ষেত্রেও ব্যাংকগুলো নানা জটিলতায় পড়ছে। এতে বিদেশে বসবাসকারী প্রবাসীরাও দেশে ব্যাংক হিসাব খোলার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

নির্বাচন কমিশন পরিচালিত এনআইডি তথ্যভান্ডারে একাধিকবার তথ্য ফাঁসের ঘটনায় সুরক্ষা ও অপব্যবহার ঠেকাতে সম্প্রতি ব্যাংকগুলোর সার্ভার-নির্ভর তথ্য যাচাইয়ের সুযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। পরিবর্তে অ্যাপ্লিকেশন প্রোগ্রামিং ইন্টারফেস (এপিআই)-এর মাধ্যমে সীমিত তথ্য যাচাইয়ের সুযোগ রাখা হয়েছে, যেখানে শুধুমাত্র নাম, জন্মতারিখ ও এনআইডি নম্বর যাচাই করা যাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) এর ভিত্তিতে নতুন হিসাব খোলার অনুমোদন দিচ্ছে না, কারণ এপিআইয়ের মাধ্যমে বিস্তারিত তথ্য যাচাই করা যাচ্ছে না।

এর ফলে ইসলামী ব্যাংকের সেলফিন, ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের নেক্সাস পে, সিটি ব্যাংকের এখনই অ্যাকাউন্ট, ব্র্যাক ব্যাংকসহ অন্যান্য ডিজিটাল হিসাব খোলার সেবা সাময়িক বন্ধ হয়ে গেছে। এসব অ্যাপে দ্রুত ও সহজে গ্রাহক হিসাব খোলা যেত, যা দেশে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি বাড়াতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছিল।

ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন, বর্তমানে বাংলা ভাষায় তথ্য যাচাই করতে হচ্ছে, যা ব্যাংকগুলোর বিদ্যমান সফটওয়্যারে স্বয়ংক্রিয়ভাবে করা সম্ভব নয়। ফলে গ্রাহকের ফন্টের পার্থক্য, স্থায়ী ঠিকানা না পাওয়া, নাম ও অভিভাবকের নামে ভিন্নতা—এসব কারণে মিল না পাওয়ার সমস্যা দেখা দিচ্ছে। গ্রাহকের আঙুলের ছাপও যাচাই করা যাচ্ছে না, যা আগে করা যেত।

পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী জানান, এখন কাগজপত্র দেখে সনাতন পদ্ধতিতে যাচাই করতে হচ্ছে, এতে সময় ও খরচ দুটোই বাড়ছে। তিনি বলেন, “আমরা নিজস্ব প্রযুক্তির মাধ্যমে দ্রুত হিসাব খোলার চেষ্টা করছি। কিন্তু আর্থিক অন্তর্ভুক্তির স্বার্থে দ্রুত এ সমস্যার সমাধান দরকার।”

এ পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলোর সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে একটি চিঠি দিয়ে দাবি জানিয়েছে—যদি নাম, জন্মতারিখ ও এনআইডি নম্বর মিলে যায়, তাহলে ইংরেজিতে সম্পূর্ণ তথ্য দেওয়া হোক এবং আঙুলের ছাপ যাচাইয়ের সুবিধা আবার চালু করা হোক।

এবিবি চেয়ারম্যান ও সিটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসরুর আরেফিন বলেন, আগে সার্ভার থেকে গ্রাহকের নাম, ছবি, অভিভাবকের নাম, ঠিকানা সব পাওয়া যেত, এখন শুধু ছবি ও নম্বর মিল পাচ্ছে। বাকিটা ‘ম্যাচ’ বা ‘নন-ম্যাচ’ আকারে জানানো হচ্ছে। শতভাগ মিল না হলে তথ্যকে ‘মেলেনি’ ধরা হচ্ছে, যদিও আগে ৮০ শতাংশ মিল হলেই হিসাব খোলা যেত।

তিনি আরও বলেন, “নতুন এই প্রক্রিয়ায় ডিজিটাল ব্যাংকিং সেবার বিকাশ মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। স্থায়ী ঠিকানা যাচাই সম্ভব না হওয়ায় হিসাব খোলা প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

ব্যাংকগুলো এখন ৩০ জুলাই পর্যন্ত পূর্বের মতো সার্ভার-অ্যাকসেস চালু রাখার দাবি জানিয়েছে। সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, বর্তমান জটিলতা অব্যাহত থাকলে ডিজিটাল আর্থিক অন্তর্ভুক্তির অগ্রগতি মারাত্মকভাবে থমকে যাবে।