এনবিআরের চলমান আন্দোলন প্রত্যাহার

প্রতিবেদক: জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চলমান ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ আন্দোলন প্রত্যাহার করা হয়েছে। রবিবার (২৯ জুন) রাত সাড়ে নয়টার দিকে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজের (বিসিআই) কার্যালয়ে আয়োজিত এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের নেতারা এ ঘোষণা দেন। ফলে কয়েক দিন ধরে চলা অচলাবস্থা আপাতত শেষ হলো।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন বিসিআই সভাপতি আনোয়ার উল আলম চৌধুরী পারভেজ এবং এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি ও ভ্যাট বিভাগের অতিরিক্ত মহাপরিচালক হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার। সেখানে আরও উপস্থিত ছিলেন দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠনের নেতারা, যেমন: এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মীর নাসির হোসেন, বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যারের এমডি সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান আহসান খান চৌধুরী, এমসিসিআইয়ের সভাপতি কামরান টি রহমান, বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এহসান, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি তাসকিন আহমেদ, এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সহসভাপতি মির্জা আশিক রানা ও মহাসচিব সেহেলা সিদ্দিকা।

আন্দোলন প্রত্যাহারের পেছনে ব্যবসায়ী নেতারা সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। দিনভর বিভিন্ন পক্ষের সঙ্গে আলোচনা শেষে তারা অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদের সঙ্গে সচিবালয়ে বৈঠক করেন। পরে এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে আলোচনা করে যৌথভাবে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হয়। সংবাদ সম্মেলনে বিসিআই সভাপতি বলেন, এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যৌক্তিক দাবিগুলো সরকার বিবেচনায় নিচ্ছে এবং নীতি ও ব্যবস্থাপনাকে আলাদা করার প্রক্রিয়ায় অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে সরকার আশ্বস্ত করেছে।

এনবিআর সংস্কার ঐক্য পরিষদের সভাপতি হাছান মুহম্মদ তারেক রিকাবদার জানান, অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনা থেকে কিছু ইতিবাচক প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। সরকার রাজস্ব ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট উপদেষ্টা কমিটি গঠন করেছে, যা পরিষদ স্বাগত জানিয়েছে। তিনি বলেন, দেশের আমদানি-রপ্তানি এবং অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে ও জনস্বার্থে আন্দোলন আপাতত প্রত্যাহার করা হলেও সংস্কারের উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।

গত শনিবার থেকে এনবিআরের চলমান শাটডাউন কর্মসূচির কারণে চট্টগ্রাম বন্দর, ঢাকা কাস্টমস হাউস, বেনাপোল, সোনামসজিদ, আখাউড়া, বুড়িমারীসহ দেশের সব শুল্ক স্টেশনে কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। পণ্য আমদানি-রপ্তানি স্থবির হয়ে পড়ে এবং চট্টগ্রাম বন্দরে চার হাজারের বেশি কনটেইনার আটকে যায়। এনবিআরের প্রধান কার্যালয়েও সব ধরনের কাজ বন্ধ ছিল।

এই আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে গত ১২ মে, যখন সরকার এক অধ্যাদেশের মাধ্যমে এনবিআর ও অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ বিলুপ্ত করে ‘রাজস্ব নীতি’ ও ‘রাজস্ব ব্যবস্থাপনা’ নামে দুটি বিভাগ গঠনের সিদ্ধান্ত নেয়। এই সংস্কার ছিল আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণের একটি শর্ত। এনবিআরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এ দুটি বিভাগ গঠনের বিরোধিতা করেননি, তবে তারা এই বিভাগগুলোতে নিয়োগের ক্ষেত্রে এনবিআরের অভ্যন্তরীণ জনবলকে অগ্রাধিকার দেওয়ার দাবি জানান। পাশাপাশি তাঁরা এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানের পদত্যাগ দাবি করেন, অভিযোগ করেন তিনি আন্দোলনকারীদের দমন-পীড়ন করছেন।

রবিবারও সকাল থেকে এনবিআর ভবনের সামনে আন্দোলনকারীরা অবস্থান নেন এবং দুপুর পর্যন্ত সব কার্যক্রম বন্ধ থাকে। বিকেলে অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকের কথা থাকলেও তা বাতিল হয়। এরপর সন্ধ্যার পর সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়া হয়।

অবশেষে সরকার, ব্যবসায়ী এবং এনবিআর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমঝোতার মাধ্যমে অচলাবস্থা কাটে। তবে আন্দোলনকারীরা স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, রাজস্ব খাত সংস্কারের দাবিতে তাঁদের কার্যক্রম আগের মতোই চলবে। এই সমঝোতা প্রক্রিয়া আবারও প্রমাণ করেছে, সংকট নিরসনে সংলাপ ও আলোচনার বিকল্প নেই।