এশিয়ায় মূল্যস্ফীতি নিম্নমুখী, বাংলাদেশে উল্টো প্রবণতা

প্রতিবেদক: আমেরিকায় যখন মূল্যস্ফীতির চাপ আবারও বাড়ছে, তখন এশিয়ার অনেক দেশেই উল্টো প্রবণতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। জাপান ও বাংলাদেশকে বাদ দিলে মহাদেশের শীর্ষ ১০ অর্থনীতিতে গড় মূল্যস্ফীতি বর্তমানে মাত্র ১.৩ শতাংশ। অথচ বাংলাদেশে এ হার এখনো ৮ শতাংশের ওপরে।

এশিয়ার বৃহত্তম অর্থনীতি চীন ও থাইল্যান্ডে ভোক্তা মূল্য বরং কমেছে। ফিলিপাইনসহ কয়েকটি অর্থনীতি মূল্যস্ফীতির পরিবর্তে মূল্যহ্রাসের মুখে। এমনকি সাধারণত উচ্চ মূল্যস্ফীতিপ্রবণ ভারতেও জুলাই মাসে মূল্যস্ফীতি দাঁড়িয়েছে মাত্র ১.৬ শতাংশ, যা ২০১৭ সালের পর সবচেয়ে কম। কয়েকটি দেশে মূল্যস্ফীতি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রার ভেতরে থাকলেও, পাঁচটিতে তা ইতিমধ্যেই লক্ষ্যমাত্রার নিচে নেমে গেছে।

এই প্রবণতার বড় কারণ চীনের অতিরিক্ত উৎপাদন। দেশটিতে দীর্ঘদিন ধরে মূল্যহ্রাস চলছে, যা অন্য দেশগুলোতেও প্রভাব ফেলছে। ২০২২ সাল থেকে চীনের রপ্তানি মূল্যসূচক প্রায় ১৫ শতাংশ কমেছে, অথচ রপ্তানি বেড়েছে। এর ফলে থাইল্যান্ডে গাড়ির দাম জুলাই পর্যন্ত ৬ শতাংশ কমেছে, আর ভিয়েতনাম ও সিঙ্গাপুরে চীনা স্মার্টফোন প্রতিযোগিতার কারণে বাজারদর নেমে গেছে।

ওপেক ও তার মিত্রদের উৎপাদন বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্তে তেলের দাম স্থিতিশীল রয়েছে। অন্যদিকে খাদ্যের দামও কমেছে। ২০২৪ সালে এশিয়ার শীর্ষ ১০ অর্থনীতিতে খাদ্যের দাম যেখানে গড়ে ৫ শতাংশ বেড়েছিল, জুলাইয়ে তা নেমে এসেছে ১ শতাংশে। বিশেষ করে চীনে অতিরিক্ত শূকর উৎপাদনের কারণে মাংসের দাম কমেছে।

অনেক দেশে চাহিদা দুর্বল হয়ে পড়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় ব্যবসায়িক মন্দা, ইন্দোনেশিয়ায় কাঠামোগত দুর্বলতা, এবং পুরো অঞ্চলে ধীরগতির মজুরি বৃদ্ধি ভোক্তা আস্থা কমিয়ে দিয়েছে। কয়েকটি দেশে শ্রমশক্তিতে অংশগ্রহণ রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছেছে, ফলে মজুরির ওপর চাপ সৃষ্টি হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো ২০২২ সালের অভিজ্ঞতায় সতর্ক হয়ে অতিরিক্ত কড়াকড়ি মুদ্রানীতি গ্রহণ করেছে, যা চাহিদাকে আরও দুর্বল করছে। দ্য ইকোনমিস্টের বিশ্লেষণ অনুযায়ী, ভবিষ্যতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতি এই নিম্ন মূল্যস্ফীতি প্রবণতাকে আরও শক্তিশালী করতে পারে। আমেরিকার চাহিদা কমে গেলে এশিয়ার রপ্তানি চাপে পড়বে এবং বিকল্প বাজার খুঁজতে হবে।