
প্রতিবেদক: মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত উচ্চ শুল্কের মধ্যেও ভারতের অর্থনীতির জন্য এলো সুখবর। আন্তর্জাতিক ঋণমান নির্ণয়কারী সংস্থা এসঅ্যান্ডপি গ্লোবাল ভারতের সার্বভৌম ঋণমান উন্নীত করেছে। এত দিন ভারতের ঋণমান ছিল বিবিবি মাইনাস, সেটি উন্নীত হয়ে দাঁড়িয়েছে বিবিবি। এটি ভারতের জন্য একটি বড় অগ্রগতি, কারণ ১৮ বছর পর প্রথমবারের মতো ভারতের অর্থনীতি নিয়ে রেটিংয়ে পরিবর্তন আনল এসঅ্যান্ডপি। সংস্থাটি জানিয়েছে, ভারতের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ভবিষ্যতেও স্থিতিশীল থাকবে এবং প্রয়োজনে ঋণমান আরও বাড়তে পারে।
এসঅ্যান্ডপি গ্লোবালের মতে, দ্রুত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, অবকাঠামো খাতে উন্নতি, আর্থিক খাতের স্থিতিশীলতা এবং সরকারের রাজস্ব শৃঙ্খলা রক্ষার প্রচেষ্টা ঋণমান বৃদ্ধির মূল কারণ। ২০২২ থেকে ২০২৪ অর্থবছরে ভারতের গড় প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৮ দশমিক ৮ শতাংশ, যা এশিয়া–প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে সর্বোচ্চ। আগামী দুই–তিন বছরও প্রবৃদ্ধির হার ৬ দশমিক ৮ শতাংশের কাছাকাছি থাকবে বলে সংস্থাটির ধারণা।
এছাড়া, ভারতের আর্থিক ঘাটতি যদি আরও কমে আসে এবং সরকারের মোট ঋণের নিট পরিবর্তন জিডিপির ৬ শতাংশের নিচে নামে, তবে ঋণমান আরও উন্নত হতে পারে। ভারতের অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ ইতিমধ্যেই ঘোষণা দিয়েছেন যে ২০২৬ অর্থবছরে রাজস্ব ঘাটতি কমিয়ে ৪ দশমিক ৪ শতাংশে নামিয়ে আনার পরিকল্পনা রয়েছে।
অন্যদিকে, ট্রাম্প ভারতের পণ্যে ইতিমধ্যেই ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন। পরে রাশিয়া থেকে জ্বালানি তেল কেনার কারণে জরিমানাস্বরূপ আরও ২৫ শতাংশ শুল্ক বসান। ফলে মোট শুল্ক দাঁড়িয়েছে ৫০ শতাংশ। তবে এসঅ্যান্ডপি মনে করে, এই শুল্ক ভারতের অর্থনীতিতে বড় প্রভাব ফেলবে না। কারণ, ভারতের অর্থনীতির ৬০ শতাংশ নির্ভর করে অভ্যন্তরীণ ভোক্তা চাহিদার ওপর। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক চাপ নিয়ন্ত্রণযোগ্য থাকবে।
ঋণমান বৃদ্ধির ফলে আন্তর্জাতিক ঋণ গ্রহণে ভারতের সক্ষমতা বাড়বে। তবে এসঅ্যান্ডপি কিছু ঝুঁকির কথাও উল্লেখ করেছে। যেমন—রাজস্ব শৃঙ্খলা রক্ষায় রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি দুর্বল হয়ে পড়লে বা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কাঠামোগতভাবে মন্থর হলে ঋণমানের স্থায়িত্ব হুমকির মুখে পড়তে পারে।
সব মিলিয়ে, ট্রাম্পের শুল্কনীতির ধাক্কার মাঝেই এসঅ্যান্ডপি গ্লোবালের এই রেটিং ভারতের অর্থনীতিতে নতুন আস্থার বার্তা দিয়েছে। শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি, অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং সরকারের রাজস্ব শৃঙ্খলা বজায় রাখার প্রতিশ্রুতি ভারতের অর্থনৈতিক ভবিষ্যতকে আরও স্থিতিশীল করেছে।