ঐতিহ্য ও স্বাদের ইফতার বাজার চট্টগ্রামের ‘রয়েল বাংলা সুইট হাউস’

অনলাইন ডেক্স: রমজান এলেই চট্টগ্রাম নগরের ঐতিহ্যবাহী ইফতার বাজারগুলো জমে ওঠে। এর মধ্যে বিশেষভাবে জনপ্রিয় এনায়েত বাজারের ‘রয়েল বাংলা সুইট হাউস , যা শতবর্ষ ধরে ইফতারপ্রেমীদের মন জয় করে আসছে। তাদের জিলাপি, মাটন ও চিকেন হালিম, বাখরখানি—এসব খাবারের স্বাদ নিতে বিকেলের আগেই দোকানের সামনে লম্বা লাইন পড়ে যায়।

জোহরের নামাজের পর থেকেই দোকানের সামনে ক্রেতাদের দীর্ঘ সারি দেখা যায়। কেউ পরিবারের জন্য বেশি পরিমাণে ইফতার কিনতে আসেন, কেউ আবার বন্ধুদের নিয়ে ইফতার পার্টির আয়োজন করেন। কর্মচারীরা ব্যস্ত হাতে অর্ডার নিচ্ছেন, প্যাকেট গুছিয়ে দিচ্ছেন, আর গরম জিলাপির সুগন্ধ ছড়িয়ে পড়ছে চারপাশে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়  সকাল থেকেই কর্মচারীরা জিলাপির মিশ্রণ তৈরি, হালিম রান্না ও ইফতারের প্যাকেট গোছানোর কাজে ব্যস্ত।প্রতিদিন ভোর থেকে জিলাপি তৈরি শুরু হয়, আর হালিম প্রায় ১৫ ঘণ্টা ধরে ধীরে ধীরে রান্না করা হয়।দুপুরের পর থেকে ক্রেতাদের আনাগোনা শুরু হলেও বিকেলের দিকে মূল ভিড় জমে।

ঐতিহ্যবাহী মেনুর বৈচিত্র্য

রয়েল বাংলা সুইট হাউসের ইফতার তালিকায় ২০০’র বেশি পদ রয়েছে। তবে ক্রেতাদের পছন্দের তালিকায় শীর্ষে জিলাপি ও হালিম। জিলাপি বিক্রি হয়  কেজি প্রতি ৪৪০ টাকা।চিকেন হালিম কেজি ৭০০ টাকা।মাটন হালিম কেজি ৯০০ টাকা।বোম্বাই মিঠাই ও অন্যান্য মিষ্টির সাথে রয়েছে ১২ প্রকার হালুয়া এর মধ্যে নতুন সংযোজন করেছে  চিকেন ব্রোস্ট

স্বাদের রহস্য

দোকানের কর্মচারীরা জানান, রয়েল বাংলা সুইট  জিলাপি তৈরি হয় খাঁটি ঘি ও উন্নতমানের চিনির সিরায়, যা স্বাদে অন্যদের থেকে আলাদা করে তোলে।

এক ক্রেতা জানান ,আমি এখানকার নিয়মিত ক্রেতা। এখানকার হালিমের স্বাদ অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। বহু বছর ধরে এখান থেকেই ইফতার কিনছি।

জিলাপি কিনতে আসা এক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন,এখানকার জিলাপির স্বাদ অসাধারণ। দাম কিছুটা বেশি, তবে মানের কারণে প্রতি রমজানেই আসতে হয়। পরিবারের সবার পছন্দের বলে রয়েল বাংলা সুইটসে  আমাকে বার বার  আসতে হয়।

আরেক ক্রেতা বলেন,অনেক জায়গায় নকল ও নিম্নমানের ইফতার বিক্রি হয়, কিন্তু রয়েল বাংলা সুইট হাউস তাদের স্বাদ ও মান ধরে রেখেছে।স্বাদ আর মান ধরে রাখার জন্যই ক্রেতা বার বার বার ভিড় জমায়।

দাম না বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি

বাজারে চড়া দাম সত্ত্বেও প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ আলী জানান, গত চার বছর ধরে তারা কোনো আইটেমের দাম বাড়াননি।

তিনি বলেন,আমার বাবা কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন কোনো দাম বাড়ানো যাবে না। এমন অনেক আইটেম আছে, যা আমরা লসেই বিক্রি করি, এর মধ্যে হালুয়া অন্যতম। তবুও আমরা গুণগত মানের সঙ্গে আপস করিনি।

ইফতার আয়োজন ও সামাজিক প্রভাব

এনায়েত বাজারের রয়েল বাংলা সুইট হাউস শুধুমাত্র খাবারের দোকান নয়, এটি চট্টগ্রামের ইফতার সংস্কৃতির অংশ।

১৯৬৫ সাল থেকে একই মালিকানায় পরিচালিত হচ্ছে।প্রতিষ্ঠাতা হাজী মোহাম্মদ মইজ আহমেদ আলী।শত বছরের বেশি সময় ধরে মান ও স্বাদ ধরে রেখেছে।

মোহাম্মদ আলী বলেন,আমরা হাতে তৈরি ২০০’র বেশি আইটেম তৈরি করি, যার ৯০ শতাংশ অন্য কোথাও পাওয়া যায় না। যদি ভালো মানের উপাদান না পাওয়া যায়, তবে বাইরে থেকে আমদানি করা হয়।

চট্টগ্রামের ইফতার বাজারের অন্যতম আকর্ষণ রয়েল বাংলা সুইট হাউসের ঐতিহ্যবাহী স্বাদ, মান ও গ্রাহকদের প্রতি অঙ্গীকার একে অনন্য করে তুলেছে। প্রতি রমজানেই শত শত মানুষ এখান থেকে ইফতার কিনে নেন, যা এ প্রতিষ্ঠানের প্রতি মানুষের আস্থা ও ভালোবাসার প্রতিফলন।