
প্রতিবেদক: কর আদায়ের নামে হয়রানি ও প্রশাসনিক জটিলতার অবসান চেয়েছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ীরা। পাশাপাশি উৎপাদন অব্যাহত রাখতে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করার দাবিও জানিয়েছেন তারা। আসন্ন ২০২৪–২৫ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট আলোচনার অংশ হিসেবে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও এফবিসিসিআইয়ের যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত পরামর্শক কমিটির ৪৫তম সভায় এসব দাবি উঠে আসে।
গতকাল বুধবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে অনুষ্ঠিত এ সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ এবং বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। সভায় সভাপতিত্ব করেন এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান। আলোচনায় আরও অংশ নেন বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা) ও বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ, ট্যারিফ কমিশনের চেয়ারম্যান মইনুল খান এবং সঞ্চালনা করেন এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক হাফিজুর রহমান।
বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ভ্যাট আদায়ে অতিরিক্ত ও অযৌক্তিক কাগজপত্র জমা দিতে হয়, যা ভ্যাট কর্মকর্তারা আটকে রেখে সময়ক্ষেপণ করেন। এতে ব্যবসায়ীরা নানা হয়রানির মুখে পড়েন।
বিটিএমএর সভাপতি শওকত আজিজ বলেন, আগে বস্ত্র খাতের যন্ত্রাংশ আমদানিতে ছাড়পত্র বিটিএমএ দিত। কিন্তু এনবিআর বিষয়টি নিজের হাতে নেওয়ার পর আমলাতান্ত্রিক জটিলতা বেড়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, ৩০ হাজার টাকা শুল্ক দিতে গিয়ে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়।
মেঘনা গ্রুপের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল জানান, কুমিল্লা অর্থনৈতিক অঞ্চলে ৬০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করার পরও দুই বছরে গ্যাস বা বিদ্যুৎ পাচ্ছেন না। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “বিদেশি বিনিয়োগ আহ্বান জানালেও, স্থানীয় উদ্যোক্তারা জ্বালানির অভাবে কষ্ট পাচ্ছেন কেন?”
তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর অনেক ব্যবসায়ীর ব্যাংক হিসাব এবং কর রেকর্ড তল্লাশি করা হচ্ছে। কোনো সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া এমন হয়রানি বন্ধে এনবিআরের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
বিজিএমইএর প্রশাসক আনোয়ার হোসেন বলেন, এইচএস কোড–সংক্রান্ত নানা জটিলতা দূর করতে হবে। ফাইবার রিসাইকেল খাতে ২২% ভ্যাট রয়েছে, যেখানে অন্যান্য দেশ প্রণোদনা দেয়। তাই এই ভ্যাট প্রত্যাহারের দাবি জানান তিনি।
এমসিসিআইয়ের সিনিয়র সহসভাপতি হাবিবুল্লাহ এন করিম বলেন, করের আওতা বাড়ানোর কথা বলা হলেও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ফলে যেসব করদাতা আছেন, তাদের ওপর চাপ বেড়েছে। এছাড়া ব্যবসা পরিচালনার অনেক খরচ কর কর্তৃপক্ষ অনুমোদন করে না, ফলে কার্যকর করহার বেড়ে যায়।
ঢাকা চেম্বারের সিনিয়র সহসভাপতি রাজীব চৌধুরী বলেন, সরকারের মোট রাজস্ব আয়ের ৮৪% আসে শুধু ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে। অন্যান্য জেলা থেকেও কর আদায় বাড়াতে হবে। পাশাপাশি কর প্রদান প্রক্রিয়া সহজ করার ওপর তিনি গুরুত্ব দেন।
এফবিসিসিআইয়ের পক্ষ থেকে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা দেওয়া হয় ব্যক্তিশ্রেণির বার্ষিক করমুক্ত আয়সীমা ১ লাখ টাকা বাড়িয়ে ৪.৫ লাখ টাকা করা।তৈরি পোশাকসহ সব রপ্তানিতে উৎসে কর ১% থেকে কমিয়ে ০.৫০% করা।কার্যকর করহার কমিয়ে আনা।শিল্প পরিচালনার ব্যয় কমাতে আমদানি পর্যায়ে অগ্রিম আয়কর (এআইটি) ধাপে ধাপে কমানো।
সভায় বিডা ও বেজার নির্বাহী চেয়ারম্যান আশিক চৌধুরী বলেন, সরকার ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিবেশ উন্নয়নে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। তিনি ব্যবসায়ীদের সুনির্দিষ্ট ও গঠনমূলক বাজেট প্রস্তাবনা দেওয়ার আহ্বান জানান।