
প্রতিবেদক: দেশ থেকে রপ্তানি হওয়া মৎস্য সম্পদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি চাহিদা রয়েছে চিংড়ির, এরপরেই রয়েছে কাঁকড়া। বর্তমানে দেশে উৎপাদিত কাঁকড়ার প্রায় ৯৮ শতাংশই চীনসহ ১৭টি দেশে রপ্তানি হয়।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২০–২১ অর্থবছরে ৩০৯ কোটি টাকার কাঁকড়া রপ্তানি হয়েছিল, যা ২০২৪–২৫ অর্থবছরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৬৭ কোটি ৮৮ লাখ টাকায়—পাঁচ বছরে প্রায় তিন গুণ বৃদ্ধি। একক দেশ হিসেবে সবচেয়ে বেশি কাঁকড়া রপ্তানি হয়েছে চীনে (৬৮৩ কোটি টাকা)। সফট সেল কাঁকড়া মূলত যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে বেশি যায়।
বাংলাদেশে মূলত দুটি ধরনের কাঁকড়া রপ্তানি হয়—নরম খোলসের (সফট সেল) ফ্রোজেন এবং জীবন্ত কাঁকড়া। সফট সেল কাঁকড়া সাধারণত প্রসেস করে রপ্তানি করা হয়, যেহেতু তা খোলসসহ খাওয়া যায়। অন্যদিকে জীবন্ত কাঁকড়া সংগ্রহ করে সরাসরি রপ্তানি করা হয়।
এই কাঁকড়ার চাষ হয় মূলত খুলনা, চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দেশে ১৬ হাজার ৬৭২ হেক্টর জমিতে কাঁকড়া চাষ হয়েছে, উৎপাদন হয়েছে ১০ হাজার ৭৮২ মেট্রিক টন।
যশোরের কেশবপুরের আবদুল্লাহ আল মামুন ‘অ্যাকুয়া ক্র্যাব’ নামে সফট সেল কাঁকড়া খামার পরিচালনা করছেন। তিনি জানান, প্রতি মাসে তাঁর খামার থেকে গড়ে ৮ টন কাঁকড়া উৎপাদিত হয়। সাতক্ষীরার নিত্য সরকার তিন বিঘা জমিতে ছোট ঘের ও বক্সে কাঁকড়া চাষ করে মাসে আয় করছেন ২০–৩০ হাজার টাকা।
পোনা বা কাঁকড়ার বাচ্চা হলো কাঁকড়া চাষের প্রধান কাঁচামাল। বর্তমানে দেশে কাঁকড়ার পোনা সংগ্রহ করা হয় সুন্দরবনের জলাভূমি থেকে। তবে প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা থাকায় চাষিদের দাবি, পোনার মৌসুম অনুযায়ী (জানুয়ারি–ফেব্রুয়ারিতে) নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়া প্রয়োজন।
দেশে কয়েকটি হ্যাচারি থাকলেও আশানুরূপ সাফল্য আসেনি। পোনা উৎপাদনের হার কম (২–৩%) হওয়ায় এই খাত এখনো চ্যালেঞ্জের মুখে। পাশাপাশি কাঁকড়ার খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত আর্টিমিয়া নামক জলজ প্রাণী এখনো আমদানি করতে হচ্ছে ভিয়েতনাম থেকে।
২০১৯ সালে কক্সবাজারের কলাতলীতে একটি সরকারি হ্যাচারি নির্মিত হলেও মেয়াদ শেষ হওয়ায় সেটি বন্ধ হয়ে যায়। পিকেএসএফ বলছে, এখন পর্যন্ত দেশের কাঁকড়া চাষে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে যুক্ত প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার মানুষ। তবে আরও অগ্রগতির জন্য প্রয়োজন পোনার স্বয়ংসম্পূর্ণতা, দক্ষ জনবল, নার্সিং ও প্রশিক্ষণ।
বিশ্ববাজারে চাহিদা থাকা সত্ত্বেও পোনা উৎপাদন ও প্রযুক্তিগত দুর্বলতার কারণে কাঁকড়া খাত তার পূর্ণ সম্ভাবনা অর্জন করতে পারছে না। সুষ্ঠু পরিকল্পনা, সরকারি সহায়তা ও গবেষণার মাধ্যমে এই খাত বাংলাদেশে বৈদেশিক আয়ের অন্যতম প্রধান উৎস হয়ে উঠতে পারে।