কাজুবাদামের বাজারে বাড়ছে চাহিদা, বাড়ছে সম্ভাবনাও

প্রতিবেদক: বাসাবাড়িতে হালকা নাশতা থেকে শুরু করে সরকারি-বেসরকারি অফিস কিংবা করপোরেট বৈঠকে আপ্যায়নের অন্যতম উপাদান হয়ে উঠেছে কাজুবাদাম। প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ ও উপকারী চর্বি সমৃদ্ধ এই বাদামটি কোভিড–পরবর্তী সময়ে দেশে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। ফলে এর চাহিদা যেমন বেড়েছে, তেমনি গড়ে উঠেছে হাজার কোটি টাকার বাজার। তবে দেশের বাজারে চাহিদার ৯০ শতাংশই এখনো আমদানিনির্ভর।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২০–২১ অর্থবছরে দেশে ২ হাজার ২১ হেক্টর জমিতে কাজুবাদাম চাষ হয়েছিল এবং উৎপাদন ছিল ১ হাজার ৬১৬ টন। তিন বছরে চাষের পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে ২০২৩–২৪ অর্থবছরে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৩১৭ হেক্টরে, আর উৎপাদন হয়েছে ৩ হাজার ৯৫ টন। যদিও প্রকৃত চাহিদা অনুযায়ী এখনো ঘাটতি অনেক।

‘কাজুবাদাম ও কফি গবেষণা, উন্নয়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্পের’ পরিচালক শহিদুল ইসলাম জানান, কাজুবাদাম চাষে যত্ন কম লাগে, এবং কৃষকেরা প্রতি কেজি বাদামে পান ২০০ টাকা, যা পাহাড়ি অঞ্চলে অন্যান্য ফলের তুলনায় লাভজনক। বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার হেক্টর জমিতে চাষ হচ্ছে, তবে সম্ভাবনা রয়েছে আরও এক লাখ হেক্টর জমিতে চাষের।

বর্তমানে দেশে কাজুবাদামের বাজার ৯০০ থেকে ১ হাজার কোটি টাকার। স্থানীয় উৎপাদন ১০০ কোটি টাকার হলেও আমদানিতে ব্যয় হচ্ছে বাকি ৮০০–৯০০ কোটি টাকা। বর্তমানে বাজারে প্রতি কেজি কাঁচা কাজুবাদাম বিক্রি হচ্ছে ১,৬০০–১,৭৫০ টাকায়, আর ভাজা বাদামের দাম ১,৮০০–২,০০০ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। ডলারের দাম বাড়ায় আমদানি ব্যয়ও বেড়েছে, যার প্রভাব পড়েছে খুচরা বাজারে।

ষাটের দশক থেকেই পাহাড়ে কাজুবাদামের চাষ শুরু হলেও প্রক্রিয়াজাত সুবিধা না থাকায় ব্যাপক চাষে আগ্রহ ছিল না। বর্তমানে দেশে ২২টি বাদাম প্রক্রিয়াকরণ প্রতিষ্ঠান রয়েছে, যার মধ্যে ১৫টি নিয়মিত উৎপাদনে রয়েছে। এদের প্রক্রিয়াজাত সক্ষমতা বছরে ১০–১২ হাজার টন। করপোরেট গ্রুপগুলোও এই খাতে বিনিয়োগ শুরু করেছে।

বান্দরবানে ‘কিষাণঘর অ্যাগ্রো’ ২০১৯ সাল থেকে প্রক্রিয়াকরণ শুরু করে এবং এখন প্রতিবছর ১০–১২ লাখ টাকার বাদাম বিক্রি করছে। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জানান, বর্তমানে ৯৫০ জন কৃষক এই চাষে যুক্ত হয়েছেন এবং ভবিষ্যতে রপ্তানির সুযোগও তৈরি হতে পারে।

কাজুবাদামে রয়েছে ওলিসিক অ্যাসিড, যা খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে হৃদ্‌রোগ প্রতিরোধে সহায়তা করে। ক্যালসিয়াম, কপার, জিংক ও ম্যাগনেশিয়াম হাড় ও দাঁত মজবুত করে। ফলে এটি শুধু নাশতার উপাদান নয়, বরং স্বাস্থ্যকর খাদ্য হিসেবেও বিবেচিত।

চাহিদা ও বাজার বাড়ছে, উৎপাদনও বাড়ছে ধীরে ধীরে। সরকারের সহায়তা ও বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়লে কাজুবাদাম হতে পারে পাহাড়ি অঞ্চলের অর্থনীতির চাকা ঘোরানোর অন্যতম মাধ্যম। পাশাপাশি দেশীয় উৎপাদন বাড়িয়ে আমদানি নির্ভরতা কমানোও সম্ভব হবে।