কাতার এনার্জির কাছে ৩৭ মিলিয়ন ডলার বকেয়া পরিশোধে প্রস্তুত বাংলাদেশ, নতুন এলএনজি চুক্তিতে জোর পেট্রোবাংলার

প্রতিবেদক: বাংলাদেশ সরকার কাতারের রাষ্ট্রায়ত্ত জ্বালানি কোম্পানি ‘কাতার এনার্জি এলএনজি’র (পূর্ব নাম কাতার গ্যাস) কাছে এলএনজি আমদানির বকেয়া ৩৭ মিলিয়ন ডলার বিল ২৩ এপ্রিল, বুধবারের মধ্যে পরিশোধ করবে বলে জানিয়েছে পেট্রোবাংলা। সংস্থাটি জানিয়েছে, আজ মঙ্গলবার পরিশোধ করা হবে ৫ মিলিয়ন ডলার এবং আগামীকাল বাকি ৩২ মিলিয়ন ডলার।

পেট্রোবাংলার পরিচালক (অর্থ) একেএম মিজানুর রহমান বলেন, “আমরা একটি সময়সূচি তৈরি করেছি যার আওতায় ২৩ এপ্রিলের মধ্যেই কাতার এনার্জিকে পুরো বকেয়া পরিশোধ করা হবে।” তিনি আরও জানান, অর্থ মন্ত্রণালয়ের ধারাবাহিক ডলার ছাড়ের ফলে বিল পরিশোধ সহজ হয়েছে।

২০২৪ সালের আগস্টে ড. ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর কাতার এনার্জি এলএনজি ও ওকিউ ট্রেডিং লিমিটেড—এই দুটি দীর্ঘমেয়াদি সরবরাহকারীর কাছে এলএনজি আমদানির বকেয়া বিল পরিশোধে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করেছে। গত বছর আগস্টে যেখানে বকেয়া ছিল ৩১৭.৪৮ মিলিয়ন ডলার, তা ২০২৫ সালের এপ্রিল নাগাদ নেমে এসেছে ৬৭.৬২ মিলিয়নে। এর মধ্যে কাতার এনার্জির কাছে বাকি ৩৭ মিলিয়ন এবং ওমানের ওকিউ ট্রেডিংয়ের কাছে ৩০.৬২ মিলিয়ন ডলার।

পেট্রোবাংলার তথ্য অনুযায়ী, চলমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দীর্ঘমেয়াদি এলএনজি আমদানির জন্য এ পর্যন্ত ১.৫৩ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ করা হয়েছে, যেখানে মোট আমদানি ব্যয় ছিল ১.৫৯ বিলিয়ন ডলার।

বাংলাদেশ ২০১৮ সালে কাতার এনার্জি এলএনজির সঙ্গে ১৫ বছরের একটি চুক্তি করে। চুক্তি অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটি প্রতি বছর ১৮-২৫ লাখ টন এলএনজি সরবরাহ করবে। প্রতিটি কার্গোতে থাকবে ৩২ লাখ এমএমবিটিইউ গ্যাস, যার দাম প্রতি এমএমবিটিইউ ১০.১১৪ ডলার।

২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্ববাজারে এলএনজির দাম রেকর্ড পরিমাণ বেড়ে যায়, একসময় স্পট মার্কেটে প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির দাম ৫২ ডলার পর্যন্ত উঠে। এ প্রেক্ষাপটে ২০২৩ সালে বাংলাদেশ কাতার এনার্জি ট্রেডিং এলএলসি-এর সঙ্গে নতুন ১৫ বছরের আরেকটি চুক্তি করে, যেখানে ২০২৬ সাল থেকে প্রতি বছর ১৫ লাখ টন এলএনজি সরবরাহের কথা রয়েছে। প্রতি কার্গোর দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১০.০৭ ডলার।

বর্তমানে বাংলাদেশে দুটি দীর্ঘমেয়াদি সরবরাহকারী রয়েছে—কাতার এনার্জি এলএনজি ও ওমানভিত্তিক ওকিউ ট্রেডিং লিমিটেড। ওকিউ ২০১৯ সাল থেকে ১০ বছরের চুক্তিতে বছরে ১ থেকে ১.৫ মিলিয়ন টন এলএনজি সরবরাহ করছে, যার মূল্য প্রতি এমএমবিটিইউ ৯.৪৪৪ ডলার।

দেশীয় গ্যাসের মজুত হ্রাস ও শিল্পখাতের ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে পেট্রোবাংলা সম্প্রতি আরও চারটি দীর্ঘমেয়াদি এলএনজি চুক্তি করেছে। এই চুক্তিগুলো হয়েছে কাতার এনার্জি ট্রেডিং এলএলসি, ওকিউ ট্রেডিং লিমিটেড, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক এক্সিলারেট গ্যাস মার্কেটিং পার্টনারশিপ এবং দেশীয় প্রতিষ্ঠান সামিট অয়েল অ্যান্ড শিপিং কোম্পানির সঙ্গে।

২০২৬ সাল থেকে এই চার প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বছরে ৮৮টি এলএনজি কার্গো সরবরাহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা দৈনিক প্রায় ১,০০০ এমএমসিএফডি গ্যাসের সমান। গড় মূল্য নির্ধারিত হয়েছে প্রতি এমএমবিটিইউ ১০.৩৯৬ ডলার, যার ভিত্তিমূল্য ধরা হয়েছে ব্রেন্ট অয়েল প্রতি ব্যারেল ৭৬ ডলার এবং এতে প্রিমিয়াম যোগ হবে ৩ থেকে ৫ সেন্ট।

ওকিউ ট্রেডিং ১০ বছরে সর্বোচ্চ ১.৫ মিলিয়ন টন এলএনজি সরবরাহ করবে। এক্সিলারেট গ্যাস ১৫ বছরে ০.৮৫–১ মিলিয়ন টন এবং সামিট প্রতি বছর ১.৫ মিলিয়ন টন সরবরাহের চুক্তি করেছে। তবে সামিটের সরবরাহ নিয়ে কিছুটা অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে, কারণ তাদের দ্বিতীয় ভাসমান টার্মিনাল প্রকল্প বাতিল করেছে পেট্রোবাংলা।