কৃষি ব্যাংক প্রবাসী আয় সংগ্রহে তৃতীয় অবস্থানে

প্রতিবেদক: চলতি বছরের প্রথম আট মাসে (জানুয়ারি–আগস্ট) প্রবাসী আয় সংগ্রহে বড় সাফল্য দেখিয়েছে কৃষি ব্যাংক। কৃষিঋণ বিতরণের জন্য পরিচিত এই ব্যাংক বিদেশ থেকে প্রবাসী আয় সংগ্রহে তৃতীয় অবস্থানে উঠে এসেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে এ সাফল্য চিত্রিত হয়েছে।

কৃষি ব্যাংক সূত্র জানায়, ২০২৩ সালে প্রবাসী আয় সংগ্রহে ব্যাংকটি ছিল ১৫তম অবস্থানে। গত বছরে সাত ধাপ উন্নতি করে সপ্তম অবস্থানে আসে। চলতি বছর জানুয়ারিতে ১১ কোটি ৬০ লাখ ডলার প্রবাসী আয় সংগ্রহ করেছিল ব্যাংকটি, যা আগস্টে বেড়ে ৩০ কোটি ১৯ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত মোট সংগ্রহ হয়েছে ১৯৭ কোটি ৬২ লাখ ডলার, যা দেশের প্রবাসী আয়ের প্রায় ৯ শতাংশ। দেশে এ সময়ে প্রবাসী আয় এসেছে ২ হাজার ১৪৫ কোটি ডলার বা ২১ দশমিক ৪৫ বিলিয়ন ডলার।

প্রতিষ্ঠার পর মূলত কৃষিঋণ নির্ভর হলেও ২০১৮ সাল থেকে প্রবাসী আয় সংগ্রহে সক্ষমতা বৃদ্ধির কাজ শুরু করে ব্যাংকটি। তখন প্রতি মাসে মাত্র ৫–৭ লাখ ডলার প্রবাসী আয় আসত। তখনই ব্যাংকটি বিশ্বের বড় প্রবাসী আয় সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ শুরু করে। সাবেক চেয়ারম্যান আলী হোসেন প্রধানিয়া জানান, শাখা ব্যবস্থাপক ও কর্মকর্তারা গ্রাহকদের আগ্রহী করতে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছেন, যার ফলে ব্যাংকটি শীর্ষ পাঁচ ব্যাংকের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে।

চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত দেশের প্রবাসী আয়ের প্রায় অর্ধেক এসেছে শীর্ষ পাঁচ ব্যাংকের মাধ্যমে। এতে তিনটি রাষ্ট্রমালিকানাধীন ব্যাংক (কৃষি ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, জনতা ব্যাংক) এবং দুটি বেসরকারি ব্যাংক (ইসলামী ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক) রয়েছে। শীর্ষ পাঁচ ব্যাংকের মধ্যে ক্রমতালিকায় অবস্থান যথাক্রমে ইসলামী ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক, জনতা ব্যাংক ও ব্র্যাক ব্যাংক। রাষ্ট্রমালিকানাধীন তিন ব্যাংক মিলিয়ে ৫৪৬ কোটি ডলার প্রবাসী আয় এনেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারির তুলনায় আগস্টে প্রবাসী আয় সংগ্রহে শীর্ষ পাঁচ ব্যাংকের মধ্যে কিছু পরিবর্তন দেখা দিয়েছে। সোনালী ব্যাংক জানুয়ারিতে দ্বিতীয় অবস্থানে ছিল, আগস্টে তা সপ্তমে নেমে আসে। আগস্টে কৃষি ব্যাংক সোনালী ব্যাংককে পেছনে ফেলে তৃতীয় অবস্থানে উঠে আসে।

ব্যাংকের মহাব্যবস্থাপক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিস্তৃত এক হাজারের বেশি শাখা, বিকাশ, নগদসহ বিভিন্ন এমএফএস প্রতিষ্ঠান ও মানি এক্সচেঞ্জ হাউসের সঙ্গে চুক্তির মাধ্যমে ঘরে বসেই প্রবাসীরা টাকা পাঠাতে পারছেন। এ কারণে কৃষি ব্যাংকের প্রতি গ্রাহকদের আগ্রহ বেড়েছে।

ইসলামী ব্যাংক ধারাবাহিকভাবে শীর্ষে আছে। জানুয়ারিতে ব্যাংকটির মাধ্যমে প্রবাসী আয় এসেছিল ২৮ কোটি ২৩ লাখ ডলার, আগস্টে তা বেড়ে ৫৫ কোটি ৫৮ লাখ ডলার। বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যসহ শ্রমিকপ্রধান দেশগুলোতে ইসলামী ব্যাংকের উপস্থিতি বেশি হওয়ায় প্রবাসীরা এটিকে বেশি ব্যবহার করছেন।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, আগস্টে দেশে প্রবাসী আয় এসেছে ২৪২ কোটি ২০ লাখ ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের ২২২ কোটি ৪১ লাখ ডলারের তুলনায় প্রায় ৯ শতাংশ বেশি। ব্যাংক খাতের সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রবাসী আয় বৃদ্ধি দেশের বৈদেশিক মুদ্রার মজুত ও রিজার্ভে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে এবং ডলারের সংকটও কমিয়েছে। অবৈধ পথে অর্থ পাঠানো রোধ এবং বৈধ পথে প্রবাসী আয় সংগ্রহে সরকারি প্রণোদনা প্রবাসী আয়ের বৃদ্ধি ত্বরান্বিত করছে।