কেন্দ্রিয় ব্যাংকের কাছে আবারো টাকা চাইলো ন্যাশনাল ব্যাংক

অনলাইন ডেক্স:সংকটে থাকা বেসরকারি খাতের বাণিজ্যিক ব্যাংক ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে নতুন করে ১ হাজার কোটি টাকার তারল্য সহায়তা চেয়েছে। এর আগে ব্যাংকটি কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ৪ হাজার কোটি টাকা সহায়তা পেয়েছিল।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, ১০ শতাংশ সুদে এই সহায়তা চাওয়া হয়েছে। তবে এ বিষয়ে এখনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।

ন্যাশনাল ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রথমে ৫-৬ হাজার কোটি টাকা সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিলেও ৪ হাজার কোটি টাকা দিয়েছে। তাই আমরা আবার ১ হাজার কোটি টাকা চেয়েছি। গ্রাহকের আমানত ফেরত দেওয়ার জন্যই এই সহায়তা প্রয়োজন।”

তিনি আরও জানান, আগের ৪ হাজার কোটি টাকা কীভাবে ও কোন খাতে ব্যয় হয়েছে, তা ব্যাখ্যা করার জন্য একটি প্রেজেন্টেশন তৈরি করা হয়েছে। আগামী রোববার (১২ জানুয়ারি) কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে এই বিষয়ে আলোচনা হবে।

ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের আগের সদস্যদের দুর্নীতির বিষয়টি তুলে ধরে মিন্টু বলেন, “অনিয়মের মাধ্যমে ঋণ প্রদান, ঋণ ও সুদ মওকুফসহ বিভিন্ন দুর্নীতি ব্যাংকটিকে এই অবস্থায় নিয়ে এসেছে।” তবে তিনি ব্যাংকের ঘুরে দাঁড়ানোর বিষয়ে আশাবাদী।

২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ব্যাংকটি প্রতিদিন গড়ে ২০-৩০ কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করেছিল, যা ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে বেড়ে ৪০-৫০ কোটি টাকায় দাঁড়ায়। জানুয়ারিতে তা আরও বেড়ে প্রায় ৬০ কোটি টাকার কাছাকাছি হয়েছে।

আহসান এইচ মনসুর বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর তারল্য সংকট মোকাবিলায় ছয়টি ব্যাংককে ২২ হাজার ৫০ কোটি টাকা সহায়তা দেয়। এর মধ্যে ন্যাশনাল ব্যাংকসহ ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক এবং এক্সিম ব্যাংক রয়েছে।

যদিও শুরুতে গভর্নর বলেছিলেন যে কোনো ব্যাংককে টাকা ছাপিয়ে সহায়তা দেওয়া হবে না, পরে তিনি এই অবস্থান থেকে সরে আসেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিলের মাধ্যমে অর্থ উত্তোলন করে দুর্বল ব্যাংকগুলোকে সহায়তা দেওয়ার কথা বলেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানান, এই ধরনের তারল্য সহায়তা অর্থনীতিতে টাকা ছাপার মতো প্রভাব ফেলবে। স্বল্পমেয়াদে এটি সমস্যার সমাধান করলেও দীর্ঘমেয়াদে সমস্যা আরও প্রকট হতে পারে।

২০০৯ সালে ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ সিকদার গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিল। ২০২১ সালে চেয়ারম্যান জয়নুল হক সিকদারের মৃত্যু এবং সিকদার পরিবারের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বের কারণে ব্যাংকটি সংকটে পড়ে। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে সৈয়দ ফারহাত আনোয়ারকে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।

এরপর ব্যাংকটি ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) সঙ্গে একীভূত করার আলোচনা শুরু হলেও রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে তা বাস্তবায়ন হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বাংলাদেশ ব্যাংক ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দেয় এবং চট্টগ্রামভিত্তিক এস আলম গ্রুপের প্রভাব থেকে ব্যাংকটিকে মুক্ত করে।

বর্তমানে তারল্য সংকট মোকাবিলায় ন্যাশনাল ব্যাংক কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সহায়তা পাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। তবে অর্থনীতিতে এর দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব এবং ব্যাংকটির টেকসই পুনর্গঠন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জন্য গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হিসেবে থাকছে।