
প্রতিবেদক:শীতকালে সবজির মৌসুমে দেশের কৃষকেরা ফসলের ন্যায্য দাম পান না। সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় অতিরিক্ত উৎপাদনের সময় সবজির দাম অস্বাভাবিকভাবে কমে যায়। সর্বশেষ মৌসুমে প্রতিটি ফুলকপি মাত্র পাঁচ টাকায় বিক্রি হয়েছে, ফলে উৎপাদন খরচও ওঠেনি। এ পরিস্থিতি থেকে কৃষকদের সুরক্ষা দিতে সবজি সংরক্ষণের জন্য ১০০টি মিনি হিমাগার নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে ১২টি হিমাগার ইতিমধ্যে নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে।
আজ বুধবার মানিকগঞ্জ জেলার সিঙ্গাইরের মেদুলিয়া সমন্বিত কৃষক উন্নয়ন সংঘের হাতে প্রথম ফারমারস মিনি কোল্ড স্টোরেজ হস্তান্তর করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষি ও স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।
জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট ফান্ডের অর্থায়নে এবং কৃষি মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়নে ‘জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় সাশ্রয়ী কোল্ড স্টোরেজ প্রযুক্তি সম্প্রসারণের মাধ্যমে কৃষকের আয় বৃদ্ধি’ প্রকল্পের আওতায় এসব হিমাগার নির্মাণ করা হচ্ছে।
সারা দেশে ৪২টি কৃষিপ্রধান জেলায় এসব হিমাগার হবে।
৫–১৫ লাখ টাকায় একটি হিমাগার তৈরি করা যায়।
হিমাগারগুলো সৌরবিদ্যুতে চালিত এবং মোবাইল অ্যাপ দিয়ে নিয়ন্ত্রণযোগ্য।
এই কোল্ড স্টোরেজের দুটি মডেল রয়েছে—ঘরভিত্তিক (টিএসসিআর) এবং কনটেইনারভিত্তিক (টিএসসিসি)। উভয় মডেলই সোলার সিস্টেমে চালিত হওয়ায় বিদ্যুৎসাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব। তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশেষ সেন্সর বসানো হয়েছে, যা মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সহজেই পরিচালনা করা যাবে। দেশের আবহাওয়া, কৃষকের প্রয়োজন ও স্বল্প খরচ বিবেচনায় তৈরি এ হিমাগারে কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত সবজি ও ফল তাজা রাখা সম্ভব হবে।
কৃষি কর্মকর্তারা জানান, একটি ঘরভিত্তিক কোল্ড স্টোরেজে ১০ টন পণ্য রাখা যায়, খরচ পড়ে প্রায় ৫ লাখ টাকা। কনটেইনার মডেলের খরচ ১৫ লাখ টাকা, যা প্রচলিত কোল্ড স্টোরেজের তুলনায় প্রায় ৭০ শতাংশ কম। কৃষকেরাই এসব হিমাগারের দায়িত্বে থাকবেন এবং প্রাথমিকভাবে কৃষিনির্ভর ৪২টি জেলায় এগুলো নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব হিমাগারে ৮-১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সবজি সংরক্ষণ করা যাবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, শীত মৌসুমে দেশে প্রচুর সবজি উৎপন্ন হয়। সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় বিপুল পরিমাণ সবজি পচে যায় এবং কৃষকেরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। মিনি কোল্ড স্টোরেজ কৃষকের ক্ষতি কমাবে এবং ভোক্তারাও উপকৃত হবেন। শীতের আগেই এসব হিমাগার নির্মাণ সম্পন্ন করা হবে এবং ভবিষ্যতে সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। প্রয়োজনে কৃষকেরা নিজেরাও অল্প খরচে বাড়িতে এসব হিমাগার তৈরি করতে পারবেন। সরকার কারিগরি সহায়তা দেবে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, বাংলাদেশ এখন কৃষি উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। এখন প্রয়োজন সংরক্ষণ ও বাজার ব্যবস্থাপনাকে আধুনিক করা। উন্নত দেশে কৃষক পর্যায়ে ছোট কোল্ড স্টোরেজ বহুল ব্যবহৃত হলেও বাংলাদেশে এ প্রকল্পই প্রথম। সোলারভিত্তিক ও অ্যাপ নিয়ন্ত্রিত প্রযুক্তির এ মিনি হিমাগার কৃষকদের জন্য নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলবে।
প্রকল্প পরিচালক তালহা জুবায়ের মাসরুর বলেন, টমেটো, ফুলকপি, মরিচ, লাউ, আম, ড্রাগন ফলসহ নানা ফসল কয়েক সপ্তাহ পর্যন্ত সংরক্ষণ করা সম্ভব হবে। ভবিষ্যতে এ প্রকল্প আরও সম্প্রসারণ করা হবে, যাতে কৃষকের আয় বাড়ে, ফসলের অপচয় কমে এবং গ্রামীণ অর্থনীতি শক্তিশালী হয়।
অনুষ্ঠানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. ছাইফুল আলম, কৃষি মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাসহ প্রায় তিন শতাধিক কৃষক উপস্থিত ছিলেন।