
প্রতিবেদক: কৃত্রিম সংকট, পণ্যের মূল্যে কারসাজি, পরিবহন খাতে চাঁদাবাজি, আমদানিতে জটিলতা এবং বাজার তদারকির দুর্বলতার কারণে শুধু ভোক্তা নয়, সৎ ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বাজারে স্বচ্ছতা ও সুষ্ঠু প্রতিযোগিতা নিশ্চিত করতে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞ ও ব্যবসায়ী নেতারা।
শনিবার রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘কার্যকর বাজার তদারকির মাধ্যমে ভোক্তা ও ব্যবসায়ের স্বার্থ সুরক্ষা’ শীর্ষক সংলাপে এই আহ্বান জানানো হয়।
প্রধান অতিথি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মো. শাহজাহান মিয়া বলেন, “অল্প কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর জন্য পুরো ব্যবসায়ী সমাজ বদনাম হচ্ছে। তাদের রুখতে সৎ ব্যবসায়ীদেরই এগিয়ে আসতে হবে।”
জাতীয় ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আলীম আখতার খান জানান, দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে এখনো ১৯ জেলায় অধিদপ্তরের কার্যালয় নেই। জনবল ও আইনি কাঠামোর সীমাবদ্ধতায় তদারকি কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য অধ্যাপক মো. শোয়েব বলেন, “বাজার তদারকিতে ডিজিটাল প্রযুক্তির ব্যবহার এবং তথ্যভিত্তিক গবেষণা প্রয়োজন। পাশাপাশি স্বচ্ছ ও সুষ্ঠু সরবরাহব্যবস্থা গড়তে হবে।”
ডিসিসিআইয়ের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রাজীব এইচ চৌধুরী বলেন, “ভোক্তার আস্থা ফেরাতে সমন্বিত কাঠামো গড়ে তুলতে হবে। সঠিক তদারকির অভাবে সৎ ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।”
মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. গোলাম মওলা বলেন, “দেশে ১৮টি চিনিকল থাকলেও বেশিরভাগই অচল। ভোজ্যতেল পরিশোধন কারখানার সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। এতে অল্প কয়েকজন আমদানিকারকের ওপর নির্ভরশীলতা বেড়েছে, যা প্রতিযোগিতায় অসাম্য সৃষ্টি করছে।”
ব্যবসায়ীরা আরও বলেন, ভোগ্যপণ্যের বাজারে স্থিতিশীলতা আনতে কর হ্রাস, পর্যাপ্ত সংরক্ষণাগার স্থাপন, আমদানিনির্ভরতা কমানো এবং খুচরা পর্যায়ে মুনাফার সীমা নির্ধারণ জরুরি।
অনুষ্ঠানে জাতীয় প্রতিযোগিতা কমিশনের সদস্য আখতারুজ্জামান তালুকদার, সুপারমার্কেট ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন, চিনি ও তেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবুল হাসেম, কোল্ডস্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের পরিচালক গোলাম সারওয়ারসহ বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের প্রতিনিধি ও ঢাকা চেম্বারের পরিচালকরা অংশ নেন।
বাজার ব্যবস্থায় অস্বচ্ছতা ও দুর্বল তদারকির কারণে সাধারণ ভোক্তা ও সৎ ব্যবসায়ীরা একইসঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। সংকট মোকাবেলায় সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বিত, প্রযুক্তিনির্ভর ও তথ্যভিত্তিক উদ্যোগ গ্রহণের দাবি জোরালোভাবে উঠেছে।